নিউটার্ন প্রতিবেদক : ঠাকুরগাঁওয়ে ওড়াঁও সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় কারাম উৎসব চলছে। ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবে পূজা এবং নাচ গানের মাধ্যমে সংসারে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে ওড়াঁও সম্প্রদায়। সম্প্রতি বর্নাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে দুই দিনের এই উৎসব শেষ হয়েছে ।
বংশপরম্পরায় যুগ যুগ ধরে কারাম উৎসব পালন করে আসছে ওড়াঁও সম্প্রদায়। কারাম মূলত একটি গাছের নাম। ওড়াঁও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের কাছে এটি একটি পবিত্র গাছ। মঙ্গলেরও প্রতীক। প্রতি বছর বাংলা ভাদ্র মাসের শেষে ও আশ্বিনের শুরুতে এই গাছের ডালকে বিপদ আপদ থেকে মুক্তি, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় পূজা অর্চনা করেন এই সম্প্রদায়ের মানুষরা।
এই দিনে উপবাস করে কারাম গাছের ডাল কেটে এনে স্থায়ী ও অস্থায়ী পূজা মন্ডপে পুঁতে রেখে পূজা-অর্চনা করেন এই সম্প্রদায়ের মানুষ। এর পর ঢাক ঢোলের তালে তালে ও নাচে গানে গল্প বলার মধ্য দিয়ে শুরু করেন উৎসব। এ সময় পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।
এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ঠাকুরগাঁও জেলার সালন্দর পাঁচপীরডাঙ্গা গ্রাম পরিণত হয় ওড়াঁওরাসহ হিন্দু, মুসলিম মিলে প্রায় সব সম্প্রদায়ের মানুষের মিলনমেলায়।
ওড়াঁও সম্প্রদায়ের মানুষেরা মনে করেন কারাম গাছের ডাল যুগে যুগে তাদেরকে বিপদ-আপদ থেকে শুরু করে মহাপ্রলয় হতে রক্ষা করে। যার কারণে ভাদ্র মাসের শেষ দিন ও পহেলা আশ্বিনে তারা এই উৎসব পালন করেন।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নরেন চন্দ্র পাহান জানান, আদিবাসীদের দুই সহোদর ধর্মা ও কর্মা। ধর্মা কারাম গাছকে পূজা করতো। আর সেই গাছ একদিন কর্মা তুলে নিয়ে নদিতে ফেলে দেয়। তখন নানা বিপদ-আপদ ও অভাব দেখা দিলে আবার সেই গাছ খুঁজে আনা হয়। তখন থেকে সেই গাছকে বিশ্বাস করে ধর্ম পালন করায় ধর্মা রক্ষা পান সব বিপদের হাত থেকে। আর কর্মা ধর্ম পালন না করায় ক্ষতির সম্মুখিন হয়। তখন থেকেই বিপদ-আপদ ও অভাব-অনটন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মূলত কারাম পূজা করা হয়।
ঢাক-ঢোলের তালে নেচে-গেয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কারাম বৃক্ষের ডাল নদীতে বিসর্জনের মধ্যদিয়ে দিয়ে এবছরের মতো শেষ হয় এই উৎসব।
নিউটার্ন/এআর