সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি ঃ রংপুর বিভাগে কাঁঠাল উৎপাদনের প্রসিদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত কাউনিয়া উপজেলা। সবুজ শ্যামল কাউনিয়ায় ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামে অন্যান্য বছরের মতো এবারও জাতীয় ফল কাঁঠালের বাম্পার ফলন হলেও দাম না পেয়ে কৃষকরা হতাশ। হাট বাজার গুলেতে কাঁঠালের ক্রেতার অভাবে অনেকে বাজারেই কাউকে এমনি দিয়ে দিচ্ছেন।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাজারে প্রচুর কাঁঠাল উঠলেও ক্রেতা নেই। জাতীয় ফল কাঁঠাল পুষ্টি গুণ অনেক বেশি হলেও দাম না থাকায় কাঁঠাল এখন কৃষকের কাঁধে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত বছর একটা ছোট কাঁঠালের দাম ছিল ৩০ টাকা আর বড় কাঁঠাল ১০০ টাক আর এবার ১৫ থেকে ৫০ টাকা। তাও ক্রেতা নেই। কাঁঠাল ক্রেতা নুর আমিন জানান কাউনিয়ার সুমিষ্ট কাঁঠাল খেলে মনে হয় এই মাটিতে যেন সৃষ্টিকর্তার অশেষ নেয়ামত রয়েছে। কাঁঠাল বিক্রি করতে আসা সোলেমন ও তারা মিয়া জানান, এবারে কাঁঠালের ফলনে আমরা খুশি, তবে পাচ্ছি না ভালো দাম। ভরা মৌসুমে আমরা কাঁঠালের দাম পাই না কারণ ফলটি দ্রুত পচনশীল। সরকার যদি ভরা মৌসুমে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিত, তাহলে সবসময়ই আমরা ন্যায্যমূল্য পেতাম। গদাই গ্রামের কৃষক শফিকুল, নাজিরদহ গ্রামের কৃষক বসুনিয়া বলেন এবার গাছে আল্লাহর রহমতে এতো বেশি কাঁঠাল ধরছে যে বাড়ির সবাই মিলে খেয়ে আসপাশের লোক জনকে দিয়েও শেষ হবে না। হাটে নিলে তাতে আবার নিয়া যাওয়া আসার খরচও ওঠে না তাই কাঁঠাল এবার গরু ছাগলের খোরাক। হরিশ^র গ্রামের শিক্ষক পরেশ চক্রবর্তী জানান কাঁঠালের পুষ্টি গুণ অনেক বেশি কিন্ত এ বছর প্রচণ্ড গরম থাকায় মানুষ অসুস্থ হওয়ার ভয়ে কাঁঠাল খাচ্ছেন না। তাছাড়া কাঁঠালের পুষ্টি গুণ সম্পর্কে অনেকেই জানেনা এমন কি জানানোর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না। বিদেশি ফল নিয়ে আমরা বেশি ব্যস্ত। সরকারি ভাবে উদ্যোগ দিলে কাঁঠাল খাওয়ার প্রধান্য বাড়ত। কৃষি বিভাগ বা অন্য সংস্থা পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গাছের কাঁঠাল গাছেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাঁঠাল পাইকার আঃ রহিম জানান ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে কাঁঠালের চাহিদা থকলেও ট্রাক ভারা বেশি এবং দ্রুত পচনশীল হওয়ায় আমাদের পোশায় না। তাই আমরা বেশি কাঁঠাল কিনি না। উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা সাইয়েদুল ইসলাম জানান, কাঁঠাল চাষে তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। উঁচু মাটিতে একবার একটি কাঁঠালের চারা রোপণ করলে ৩ থেকে ৪ বছর থেকে শুরু করে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ বছর অনায়াসে ফলন পাওয়া যায়। কাঁঠাল একটি পুষ্টিকর ফল। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে। কাউনিয়ার কাঁঠালে কোনো প্রকার কেমিক্যাল মিশানো হয় না বলে ভিটামিন অক্ষুণ্ন থাকে। কাঁঠাল গাছের কাঠ আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তানিয়া আকতার জানান উপজেলায় প্রচুর কাঁঠালের গাছ রয়েছে তাছাড়া এবারে আবওহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভাল হয়েছে তাই মৌসুমের শুরুতে কিছুটা দাম থাকলেও বর্তমানে কাঁঠালের দাম খুবই কম। উৎপাদনের তুলনায় ক্রেতার চাহিদা কম হওয়ায় কাঁঠলের বাজারে ধস নেমেছে।
Newturn24.com Latest News Portal