• মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে বিপর্যয়
• দুর্ভোগ চরমে, সংকটে স্থানীয় অর্থনীতি
ঢাকা :নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অনেক জায়গায় রবির মোবাইল নেটওয়ার্কে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।গত তিন মাসে বিভিন্ন স্থানে দুর্বৃত্তরা রবির মোবাইল টাওয়ারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ফাইবার কেটে ফেলেছে।এতে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় অর্ধশত টাওয়ার।এমনকি অপরাধী চক্র কয়েক জন নিরাপত্তা কর্মিকে অপহরণ করেছে।এমন পরিস্থিতিতে টাওয়ারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছেনা টাওয়ার কোম্পানি ইডটকো বাংলাদেশ লিমিটেডও।আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে কাজ করছে।তবে এখনও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রবি কর্তৃপক্ষ।রাজস্ব ও গ্রাহক নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে মোবাইল অপারেটর রবি। অন্যদিকে মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়ছেন স্থানীয়। সেখানে পণ্য পরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্য ও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে পার্বত্য তিন জেলা।
খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, লক্ষীছড়ি, পানিছড়ি, দিঘীনালা, মানিকছড়ি, নানিয়ারচড়, রাওজান, ফটিকছড়ি, বাঘাই ছড়িসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় কিছু অপরাধী গোষ্ঠী ৫১টি মোবাইল টাওয়ারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে ও ফাইবার কেটে ফেলেছে।প্রায় তিন মাস ধরে চলতে থাকা এধরনের কার্যকলাপের পেছনে চাঁদাবাজির উদ্দেশ্য রয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া তথ্যানুসারে, অপরাধীচক্রের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে শুধু খাগড়াছড়িতেই ৩২টি টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এরমধ্যে সাতটি সচল করা সম্ভব হয়েছে।কিন্তু এখনও বন্ধ রয়েছে ২৫টি টাওয়ার।এর মধ্যে কয়েকটি মাঝেমধ্যে সচল হলেও ফের তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।এছাড়া পার্বত্য তিন জেলার অন্তত ২৬টি টাওয়ার সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ফাইবার কেটে ফেলেছে সন্ত্রাসীরা।দেখা গেছে কোথাও কোথাও ফাইবারগুলো ঠিক করা হলেও ওইদিনই তা আবার কেটে দেয়া হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এ পর্যন্ত টাওয়ারগুলোর তিন জন নিরাপত্তা কর্মি অপহৃত হয়েছেন। অপরিচিত নম্বর থেকে রবির কর্মিদের নানাভাবে হুমকিও দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।এমন স্পর্শকতার পরিস্থিতিতে টাওয়ার পুনরুদ্ধার কাজেও কোনো অগ্রগতি নেই।ইডটকো সাইটের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকলেও তা ঠিকভাবে পালন করতে পারছে না তারা।এতে আরও বেশি রাজস্ব হারানোর শঙ্কায় পড়েছে রবি।
আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী, ইডটকোর নিরাপত্তা দল এবং স্থানীয় প্রশাসন সমস্যাটির সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে।গত ২৩ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।বৈঠকটির লক্ষ্য ছিল সার্বিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা এবং ২৮ফেব্রুয়ারির মধ্যে সমস্যার সমাধান করা।
এদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় ইডটকো কিছু টাওয়ার পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হলেও দুর্বৃত্তদের আক্রমণে পুনরায় সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।ইডটকো ইতোমধ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠির মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি অবহিত করেছে। এ ছাড়া রবির করপোরেট অ্যাফেয়ার্স টিম বিটিসিএলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখছে, যাতে কোনো ফাইবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে দ্রুতই তা পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।এছাড়াও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগে ইডটকোকে সহযোগিতা করছে রবি।ইডটকো, রবি ও সংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।এছাড়া ইডটকো ও রবি টিম প্রতিদিন যৌথভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল টাওয়ার এভাবে বন্ধ থাকার ফলে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক না থাকায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ সরবরাহ ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন বিঘ্নিত হচ্ছে। সেখানকার অনেক দুর্গম এলাকায় মোবাইল যোগাযোগই একমাত্র ভরসা। কিন্তু টাওয়ার বন্ধ থাকায় রোগীরা হাসপাতাল বা চিকিৎসকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারছেন না।এমনকি জরুরি মুহূর্তে অ্যাম্বুলেন্সও ডাকা যাচ্ছে না। ফলে দুর্ঘটনায় আহত, গর্ভবতী নারী বা সংকটাপন্ন রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ওষুধ সরবরাহ ব্যবস্থায়ও নেমে এসেছে বিপর্যয়। কারণ ফার্মেসি ও সরবরাহকারী রা সময়মতো অর্ডার বা সমন্বয় করতে পারছেন না।বিশেষ করে ইনসুলিন, অক্সিজেন বা জীবনরক্ষাকারী ওষুধের সরবরাহে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।দ্রুত মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
রবির মোবাইল টাওয়ার বন্ধ থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাও মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারছেন না।ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, খাদ্যসামগ্রী ও কাঁচামাল অর্ডার বা সরবরাহে দেরি হচ্ছে।বিশেষ করে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে নেটওয়ার্কের অভাবে পরিবহন পরিচালনায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।পরিবহন ব্যবসায়ীরা চালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় পণ্যবাহী যানবাহন সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না।কমেযাচ্ছেখাদ্য, শিশুখাদ্যওগৃহস্থালিরপ্রয়োজনীয়জিনিসপত্রেরসরবরাহ। ফলেকোথাওকোথাওমূল্যবৃদ্ধিওকৃত্রিমসংকটতৈরিরঘটনাঘটছে।এছাড়াস্থানীয়কৃষকেরাওনানাসমস্যায়পড়েছেন।উৎপাদিতপণ্যশহরেপাঠানোরজন্যক্রেতাবাআড়তদারদেরসঙ্গেঠিকভাবেযোগাযোগরাখতেপারছেননাতারা।ফলেঅনেকজায়গায়পণ্যনষ্টহয়েযাচ্ছেবাকৃষকরাকমদামেবিক্রিকরতেবাধ্যহচ্ছেন।নেটওয়ার্কপুনরুদ্ধারকরানাহলেস্থানীয়বাজারেখাদ্যসংকট, মূল্যবৃদ্ধিওব্যবসায়িকক্ষতিরমাত্রাআরওবাড়তেপারেবলেআশঙ্কাকরাহচ্ছে।
খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ির বাসিন্দা রবিউল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন ‘কয়েক মাস ধরে মোবাইল নেটওয়ার্ক ঠিকভাবে কাজ করছে না। আমরা এ পরিস্থিতিতে খুবই বিপদে পড়েছি। অনেক সময় তো জরুরি যোগাযোগও করতে পারি না। বিশেষ করে রোগী হলে অথবা কোনো দুর্ঘটনা হলে দ্রুত সাহায্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ফার্মেসিতেও ওষুধপত্র সব পাওয়া যাচ্ছে না। দ্রুত টাওয়ারগুলো চালু না হলে সংকট আরও বাড়বে।’
রাঙ্গামাটি সদরের বাসিন্দা জুনাং তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘এখনকার পরিস্থিতি খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। টাওয়ারের সমস্যা চলতে থাকায় যোগাযোগে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বাজারে গেলে অনেক জিনিসপত্র পাওয়া যায় না। টাওয়ারগুলোতে সন্ত্রাসী হামলার কারণে আইন-শৃঙ্খলা নিয়েও আমরা খুব শঙ্কার মধ্যে আছি। আমরা চাই, সরকারের সহায়তায় দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হোক, না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
এ অবস্থায়ক্ষতিগ্রস্তমোবাইলটাওয়ারগুলোচালুকরাওসেখানকারনিরাপত্তাজোরদারকরতেদ্রুতপ্রয়োজনীয়ব্যবস্থানিতেসংশ্লিষ্টকর্তৃপক্ষেরপ্রতিআহ্বানজানিয়েছেরবি।প্রতিষ্ঠানটিবলেছে,নিরবচ্ছিন্নমোবাইলওইন্টারনেটসংযোগনিশ্চিতকরাপার্বত্যচট্টগ্রামঅঞ্চলেরঅর্থনৈতিকউন্নয়নওনিরাপত্তারজন্যঅত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ।টাওয়ারসমস্যারদ্রুতসমস্যাসমাধাননাহলেরাজস্বওগ্রাহকহারিয়েআরওবেশিক্ষতিগ্রস্তহবেরবি। পাশাপাশিআরওবেশিসংকটেপড়বেস্থানীয়দেরজীবনযাত্রা ও সেখানকারঅর্থনীতি।
-প্রেস রিলিজ