এবছরের ৪জুন তারিখে আমেরিকার জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিতএকটি নিবন্ধে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আধুনিক চিকিৎসা শিক্ষায় পুষ্টি সম্বন্ধে বেশি কিছু শেখানো হচ্ছে না।শরীরের উচ্চতা আর বয়স অনুযায়ী বডি মাস ইনডেক্স বাবিএমআই দেখে, ওজন মেপে স্বাস্থ্যের অবস্থা আন্দাজ করে চিকিৎসকরা রোগীদের গড়পড়তা ভাবে ওজন কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।এর ফলে মানুষের মাঝে মোটা হয়ে যাওয়া এড়াতে না খেয়ে থাকার প্রবণতা বাড়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরির প্রবণতা কমছে।সুস্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টি অন্যতম প্রধান উপকরণ হলেও রোগীকে ওষুধের পাশাপাশি পুষ্টিভিত্তিক চিকিৎসা পরামর্শ প্রদানের চেষ্টা কম চিকিৎসকদের।নিবন্ধের মূল লেখক প্রফেসর কেয়ার্নিগন সালাস আমেরিকান চিকিৎসকদের বিষয়ে এরকম সমাধানে পৌঁছালেও বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার দিকে মনোযোগ দিলে ভিন্ন কিছু কি চোখে পড়বে? আমরা ওজন কমানোর ফ্যাশনের পেছনে ছুটতে ইউটিউব ভিডিওর সাহায্য নেই।চিকিৎসকের কাছে ওষুধের সন্ধানে গেলেও পুষ্টি সংক্রান্ত পরামর্শ পাইনা এবং এজন্য কোনো পুষ্টিবিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া দরকার কিনা বুঝতে পারি না।না খেয়ে থাকাকে স্বাস্থ্যসচেতন অভ্যেস হিসেবে মনে করা হয় এখনো।আবার পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে বুঝতে পারলেও বিদ্যমান পুষ্টি বৈষম্যের কারণে অনেক পরিবারেই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না।পুষ্টি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে কম উপার্জনক্ষম পরিবার সহ মোটাদাগে যে কোনো পরিবারের কন্যাশিশু, মা, নারী এবং বয়স্ক সদস্যরা।
বাংলাদেশে পুষ্টিবৈষম্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যা।দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটছে, তবুও অনেক মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে না।আর্থিক অক্ষমতার ফলে অনেক পরিবার মূল্যস্ফিতিতে প্রতিনিয় তখাদ্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করতে পারছে না।পুষ্টি সম্পর্কিত শিক্ষা না পাওয়ায় সচেতনতার অভাবে অনেকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না।আবার যারা শিক্ষিত, তাদের মধ্যে পুষ্টিহীনতার সমস্যা কম।বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এই সমস্যা বেশি।ভৌগোলিক বৈষম্যের কারণেও শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের পুষ্টির অবস্থা অনেক খারাপ।এতে স্থানীয় কৃষির উৎপাদন এবং খাদ্যের প্রাপ্যতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আর গ্রাম-শহর নির্বিশেষে নারীর অবস্থাতো চিরকালই প্রান্তিক অবস্থানে।নারীরা সাধারণত পরিবারে পুষ্টি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকেন।একারণে তারাও তাদের সন্তানরা প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হন।বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে রক্তাল্পতার হার খুব উচ্চ।শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতার হার উদ্বেগজনক।ইউনিসেফ এর তথ্য মতে, ২০২১সালে বাংলাদেশের শতকরা ৩৩ভাগ শিশু উচ্চমাত্রার পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।গরিব পরিবারের শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতার হার প্রায় শতকরা ৪০ভাগ।এটি তাদের স্বাস্থ্যে এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়নেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২০সালেশতকরা৩২ভাগশিশুপাঁচবছরেযতটুকুউচ্চতালাভকরাউচিত, তাকরতেপারছেনা।১০০জনশিশুরমাঝে১৫জনইকমওজনেরসমস্যায়ভুগছে।আরগরিব-ধনী, শিক্ষিত-অশিক্ষিতসবপরিবারেকন্যাশিশুরক্ষেত্রেপুষ্টিবৈষম্যবেশিএবংএটিঅনেককারণেঘটে, যারমধ্যেসবচেয়েগুরুত্বপূর্ণহচ্ছেকন্যাশিশুরপ্রতিসামাজিকবৈষম্যমূলকদৃষ্টিভঙ্গী।কন্যাশিশুরজন্যকমপুষ্টিকরখাদ্যদেওয়াকেস্বাভাবিকমনেকরাহয়, যাতাদেরবৃদ্ধিওবিকাশকেক্ষতিগ্রস্তকরে।অনেকঅভিভাবকইজানেননাকন্যাশিশুকেকীভাবেসঠিকপুষ্টিদিতেহবে, কেনোদিতেহবে।
পুষ্টিবৈষম্যমুক্তবাংলাদেশগড়েতুলতেসমন্বিতউদ্যোগএবংজনসচেতনতাবৃদ্ধিরপ্রয়োজনরয়েছে।পুষ্টিসংক্রান্তক্যাম্পেইনওকর্মশালারমাধ্যমেমানুষকেসচেতনকরতেহবে, গর্ভবতীনারীদেরপুষ্টিরচাহিদাপূরণেরজন্যবিশেষপ্রকল্পগ্রহণকরাএবংনারীরশিক্ষাওকর্মসংস্থানবৃদ্ধিরমাধ্যমেনারীরস্বাস্থ্যএবংপুষ্টিরউন্নয়নকরাজরুরি।স্কুলেপুষ্টিশিক্ষারমাধ্যমেশিশুদেরমাঝেপুষ্টিরগুরুত্বতুলেধরেসচেতননাগরিকহিসেবেগড়েতুলতেহবে।দরিদ্রপরিবারেরজন্যআর্থিকসহায়তাএবংখাদ্যনিরাপত্তানিশ্চিতকরতেহবে।কৃষকদেরপ্রশিক্ষণওপ্রযুক্তিরব্যবহারেরমাধ্যমেপুষ্টিসমৃদ্ধখাদ্যউৎপাদনবৃদ্ধিকরতেহবে।কৃষকদেরহাতেকলমেউচ্চফলনশীলখাদ্যশস্যচাষেবিজ্ঞানভিত্তিকজ্ঞানওপরামর্শপ্রদানকরেজনগণকেখাদ্যনিরাপত্তাপ্রদানেবিসিএসকৃষিক্যাডারদুর্দান্তভূমিকারাখছেন।তবেপুষ্টিনিরাপত্তারজন্যখাদ্যনিরাপত্তারসাথেসাথেপুষ্টিরঅধিকাররক্ষাকরতেদরকারপুষ্টিবিষয়কগবেষণা, গবেষণারফলাফলব্যবহারকরেসরকারেরপুষ্টিবিষয়কনীতিনির্ধারণকরাজরুরি।জরুরিসামাজিকনীতিমালার, এরসাথেদরকারযথাযথআইনেরপ্রয়োগ।
পুষ্টিসংক্রান্তপরামর্শপেতেকোথায়যাবেমানুষ? গ্রামীনএবংসুবিধাবঞ্চিতএলাকায়স্বাস্থ্যসেবাওপুষ্টিসংক্রান্তসেবাপাওয়াকঠিন।স্বাস্থ্যসেবাউন্নয়নেরমাধ্যমেপুষ্টিবৈষম্যদূরীকরণেসরকারি-বেসরকারিওআন্তর্জাতিকসংস্থারবহুমুখীঅংশীদারীত্বেরমাধ্যমেগ্রামীনএলাকায়পুষ্টিক্লিনিকস্থাপনকরাদরকার, যেখানেসেবাসহজীকরণেরমাধ্যমেপুষ্টিপরামর্শওচিকিৎসাদেওয়াহবে।যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহঅনেকদেশেপুষ্টিবিদএবংডায়েটিশিয়ানদেরদ্বারাপরিচালিতএরকমপুষ্টিক্লিনিকআছে।সেবাপ্রার্থীব্যক্তিরজন্যযথাযথপুষ্টিপরিকল্পনাতৈরি, পুষ্টিকরখাদ্যওরোগপ্রতিরোধেরজন্যবিশেষজ্ঞপরামর্শদেওয়াহয়সেখানে।বাংলাদেশেরশহরঅঞ্চলেপুষ্টিবিশেষজ্ঞরাচেম্বারেসেবাদিচ্ছেন, যাদরিদ্রদেরজন্যসহজলোভ্যনয়।সাধারণনিম্নআয়েরমানুষেরজন্যবিনামূল্যেসেবাদিতেসক্ষম ‘পুষ্টিক্লিনিক’ গড়েতোলামোটেওকঠিনকাজনয়।
বাংলাদেশসিভিলসার্ভিসেপুষ্টিক্যাডারবলেকোনোক্যাডারনেই।সিভিলসার্ভিসে ‘পুষ্টিক্যাডার’ যোগকরারমাধ্যমেপুষ্টিবৈষম্যমুক্তবাংলাদেশগড়তেনোবেলশান্তিপুরস্কারজয়ীপ্রফেসরমোহাম্মদইউনূসেরনেতৃত্বাধীনঅন্তর্বর্তীকালীনসরকারযুগান্তকারীভূমিকারাখতেপারেন।পুষ্টিক্যাডারেরকর্মকর্তারা ‘পুষ্টিক্লিনিক’ গড়েতুলতেযথাযথভূমিকারাখতেপারবেন, বিসিএসকৃষিওবিসিএসখাদ্যক্যাডারেরকর্মকর্তাদেরজ্ঞানওঅভিজ্ঞতারসাথেপুষ্টিক্যাডারেরপুষ্টিবিশেষজ্ঞদেরসমন্বিতপ্রচেষ্টাকেকাজেলাগানোরমাধ্যমেপুষ্টিবৈষম্যদূরকরাসম্ভব।
বিদ্যমানপ্রশাসনিককাঠামোতেপুষ্টিবৈষম্যদূরীকরণেরবিশালওবিস্তৃতকাজটিসম্ভবকীনাভেবেদেখাদরকার।উদাহরণহিসেবেবলাযায়, কৃষিমন্ত্রণালয়েরদায়িত্বেমাঠপর্যায়েকাজকরেকৃষকওকৃষিরসমস্যাঅনুধাবনওসমাধানেসচেষ্টদক্ষকৃষিকর্মকর্তাযেমনদরকার, তেমনিখাদ্যমন্ত্রণালয়েরদায়িত্বেআসাউচিতখাদ্যনিরাপত্তাসম্বন্ধেশিক্ষাঅর্জনকরা, বিশেষপ্রশিক্ষণলাভকরাওদীর্ঘকালএইসেক্টরেকাজকরেঅভিজ্ঞতাঅর্জনকরাকর্মকর্তার।বাস্তবেএরকোনোটাইকখনোহয়নি।ছাত্র-জনতারগণঅভ্যুত্থানেরমাধ্যমেবাংলাদেশসংস্কারেরযেদুর্দান্তসুযোগএসেছে, সেসুযোগকেকাজেলাগিয়েপুষ্টিবৈষম্যমুক্তবাংলাদেশগড়তেকৃষিওখাদ্যমন্ত্রণালয়েরসচিবসহনানাপদেকৃষিওখাদ্যক্যাডারেরকর্মকর্তাদেরপদায়নঅত্যাবশ্যকীয়হয়েপড়েছে।আরসত্যিইযদি ‘পুষ্টিক্যাডার’ যাত্রাশুরুকরতেপারে, তবেএইক্যাডারেরকর্মকর্তাদেরকাজেরসুযোগসৃষ্টিওসম্ভাবনাকেবিস্তৃতকরারসঠিকপরিকল্পনাওএকইভাবেকরাদরকার।কেননা, একুশশতকেরবাংলাদেশবৈষম্যমুক্তনাহলেকোনোভাবেইবিশ্বেরসাথেপ্রতিযোগিতায়পেরেউঠবেনা।আরসংস্কারেরসুযোগপাওয়াবাংলাদেশপুষ্টিবৈষম্যকেবজায়রাখতেচাইবেনাবলেইআমরাআশাবাদীহয়েউঠছি।
লেখিকা: উপ প্রধান তথ্যঅফিসার তথ্য অধিদফতর
-পি. ফি.