সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার বেশির ভাগ হাওরে বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য বেরিবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিগুলো। অর্ধেকের বেশি মাটি কাটার কাজও শেষ করেছেন কেউ কেউ। ব্যতিক্রম শুধু আসামপুর সংলগ্ন দেখার হাওরের মহাসিং নদীর পাড়ের ৪৯ নম্বর পিআইসিতে। এই পিআইসির সভাপতি আস্তমা গ্রামের কৃষক শফিক নূর। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কমিটি গঠনের প্রায় অর্ধমাস সময় পার হয়ে গেলেও এখনো কাজ শুরু করেন নি শফিক নূর ও তার কমিটি। এতে ক্রমশ শঙ্কা বাড়ছে হাওর পাড়ের কৃষকদের। যদি আগাম বন্যা হয় তাহলে সব শঙ্কা থেকে যাবে এই বাঁধেই। তবে শফিক নূর বলেছেন, দেরিতে কাজ পাওয়ার কারণেই কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে তাদের। এদিকে যেসব পিআইসি ইতোমধ্যে ৩০ শতাংশ বা অর্ধেকের বেশি মাটি কাটার কাজ শেষ করেছেন, তারা কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিল নিয়ে। কাজ পেলেও এখনো কোনো বরাদ্দ পায় নি কোনো পিআইসি। অপেক্ষা করছেন কখন পাবেন প্রথম বিল। শফিক নূরের পিআইসির কাজ শুরু না হওয়ার কারণ অনুন্ধান করে জানা যায়, আসামপুর গ্রামের পশ্চিম প্রান্ত থেকে শুরু দেখার হাওরের ডাইক ১ এর ৪৮ নম্বর পিআইসির কাজ, যার সভাপতি একই গ্রামের কৃষক হুমায়ুন কবির। প্রকল্পটির দৈর্ঘ্য ৭০০ মিটার। এই প্রকল্প যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকেই শুরু হয়েছে ৪৯ নম্বর পিআইসির কাজ। প্রথমে প্রকল্পটি আসামপুর গ্রামের জসিম উদ্দিনের কমিটিকে দেয়া হলে বরাদ্দ স্বল্পতার কথা বলে তা সারেন্ডার করেন তিনি। পরে পুনরায় আগ্রহী শফিক নূরকে সভাপতি ও তোরাব আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে দেরিতে কাজ দেয়া হয়। জানা যায়, ডাইক ১ ও ২ মিলিয়ে ৮টি প্রকল্প আছে এই হাওরে। বাকী ৭টিতে কাজ শুরু হলেও এখনো শুরু হয়নি এই প্রকল্পের ৬৫০ মিটারের কাজ। এখানে বরাদ্দও দেয়া হয়েছে ২১ লক্ষ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাঁধে একটি বড় ভাঙা আছে। এটি খুবই বিপজ্জনক হতে পারে। তাই এই ভাঙায় ভালোভাবে কাজ করতে যথাযথ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে কোনো প্রকল্পই এখনো বরাদ্দের একটি টাকাও পাননি। টাকা পেতে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা পানি উন্নয়ন কতৃর্পক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আসামপুর গ্রামের এক কৃষক বলেন, আমাদের গ্রামের শত শত বিঘা জমি এই হাওরে চাষাবাদ হয়েছে। বাকি সব পিআইসির কাজ শুরু হয়েছে কিন্তু ৪৯নম্বর প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু হয়নি। যদি আগাম পানি চলে আসে তাহলে এদিকে হাওরে পানি প্রবেশের আশঙ্কা থেকেই যায়। ৪৯ নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি শফিক নূর বলেন, আমি দেরিতে অর্থাৎ তিন দিন আগে কাজ বুঝে পেয়েছি। আজ শুক্রবার থেকে কাজ শুরু করবো। বেরিবাঁধে কোনো এক্সেভেটর বা অন্য কোনো উপাদান নাই কিভাবে কাজ তুলবেন? জানতে চাইলে শফিব নূর বলেন, সবকিছু রাস্তায় আছে। আজই সব চলে আসবে। কাল থেকে কাজ শুরু হবে, দূর থেকে মাটি আনা হবে এবং আমার সব ব্যবস্থা আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মোমিন মিয়া বলেন, প্রথমে আমরা প্রকল্পটি জসিম উদ্দিন নামক একজন কৃষককে দিয়েছিলাম। অপ্রতুল বরাদ্দের কথা বলে তিনি কাজটি ফিরিয়ে দিয়েছেন। পরে আস্তমা গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম ও তোরাব আলীকে কাজ দেয়া হয়। এজন্য একটু দেরি হয়েছে। তবে যদি তারা কাজ শুরু করতে গড়িমসি করে তাহলে তাদেরকেও বাদ দেয়া হবে। শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা বলেন, যে পিআইসির কাজ এখনো শুরু হয়নি সে বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। প্রথম বিলের বরাদ্দ কপি বা চিঠি হাতে পেয়েছি। আমরা আপাতত আগামী সপ্তাহে ২১ শতাংশ টাকা প্রকল্পকে দিতে পারবো। যাদের কাজ একটু বেশি হয়েছে, তাদেকে বেশি বিল ও যাদের কম হয়েছে তাদেরকে কম বিল দেয়া হবে। কাজের অনুপাতে তারা বিল পাবেন। প্রথম বিলে ১৮ থেকে ২১ শতাংশ টাকা পাবে প্রকল্পগুলো।
