Home » প্রধান খবর » সুনামগঞ্জ জেলার সকল মহাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা

সুনামগঞ্জ জেলার সকল মহাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ জেলার সব বালুমহালে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, পরিবহন ও মজুত নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে প্রশাসন। জেলায় থাকা কোনো বালুমহাল ১৪৩২ বাংলা সনের জন্য ইজারা হয়নি, তাই গত সোমবার পয়লা বৈশাখ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। গত রবিবার (১৩ এপ্রিল) জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সুনামগঞ্জে অবস্থানরত সেনাবাহিনী ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিজিবি ২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও জেলা পুলিশ সুপারকে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা ট্রাকমালিক ও শ্রমিক সমিতিকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। যেহেতু সুনামগঞ্জ জেলার কোনো বালুমহাল নতুন বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয়নি, তাই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, পরিবহন ও মজুত বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সড়কপথে টহল জোরদারের অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। গত বছর যাদুকাটা নদীর বালুমহালগুলো ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে ২৭ ফেব্রুয়ারি ইজারা কার্যক্রম স্থগিত ও মহাল বিলুপ্ত ঘোষণার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষ থেকে তিনটি মন্ত্রণালয়ের সচিব, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ ১৩ ব্যক্তিকে আইনি নোটিশ দেয়া হয়। অবাধে বালু উত্তোলন বন্ধ, নদী ও এলাকার প্রকৃতি-পরিবেশ, মানুষের বাড়িঘর রক্ষার স্বার্থে প্রতিকার চেয়ে এই নোটিশ প্রদান করে বেলা। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। জেলার সর্ববৃহৎ বালু মহাল তাহিরপুরের যাদুকাটায় ইজারাসীমা অতিক্রম করে চলেছে পরিবেশ বিধ্বংসী বোমা বা সেইভ মেশিনের তাণ্ডব। কয়েক কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজার ও সেইভ মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে। সনাতনী পদ্ধতিতেও তীর কাটা হয়েছে। এতে বিলীন হচ্ছে রাস্তাঘাট, মানুষের ঘরবাড়ি ও সরকারি খাস জমি। পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য, দুর্গম এলাকা হওয়ায় অভিযানের খবর আগে ভাগে পেয়ে সরে যায় দুর্বৃত্তরা, এ কারণে বালু লুটপাটের সঙ্গে জড়িত মূলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। গত কয়েক বছর ধরেই ইজারার দোহাই দিয়ে নদীর তীরবর্তী এলাকায় পরিবেশ বিধ্বংসী তাণ্ডব চলেছে। একারণে নদীর তীরবর্তী কাঁচা-পাকা রাস্তা,ঘরবাড়ি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। নদীর তীরের সরকারি খাস জমির দখলদাররা ও কিছু রেকর্ডিয় জমির মালিকেরাও নদীতে বালু লুটপাটের অংশীদার। তারা প্রতিফুট বালু আট থেকে দশ টাকা করে বিক্রয় করেছে। একারণে নদীর পাড়ের ঘরবাড়ি বিলীন হলেও নিরব রয়েছেন এরা। সরেজমিনে এপ্রিলের ৬ তারিখে ঘাগড়া গ্রাম তীরবর্তী যাদুকাটা নদীতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের অনেক পতিত জমি, ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট নদীগর্ভে চলে গেছে। নদীর মাঝে কোথাও ত্রিভুজ আকৃতির স্তূপ মতো ভেসে উঠেছে। গ্রামের শেষ সীমানায় আরসিসি সড়কের অংশ নদীতে পড়ে রয়েছে। এছাড়াও দেশের বৃহৎ শিমুল বাগানের পূর্বদিক থেকে বালু কেটে দেয়ার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বাগানটি। নদীর ইজারাকৃত অংশের বাইরে নদীর পাড় থেকে শতাধিক শ্রমিক বেলচা দিয়ে নৌকায় বালু তুলেছেন। গত রোববার প্রশাসনের সিদ্ধান্তের ফলে বন্ধ হলো যাদুকাটায় দীর্ঘদিনের তাণ্ডব। জেলার চলতি নদের ধোপাজান বালুমহাল ইজারা না হলেও বিভিন্নভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। গত বছরের ৫ আগস্টে পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই মহালে প্রকাশ্যে বালু লুট শুরু হয়। আড়াই মাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বালু লুট হয় এই নদ থেকে। সুনামগঞ্জ জেলার সকল বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করার বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, এবার অবৈধভাবে কেউ এক ছটাক বালুও তুলতে পারবেন না। বিষয়টি সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

0 Shares