হাতের মুঠোয় সরকারি সেবা। বিষয়টা অবাক করার মতো, তাই না? হ্যাঁ। কারণ কয়েক বছর আগেও সরকারি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ভাবনা কাজ করতো। সময়ের পরিবর্তনে দেশ ডিজিটাল হয় এবং সরকারি সেবা মানুষের হাতের মুঠোয় আসতে থাকে। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে উত্তরণের পর দেশ এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সরকারি সেবাসমূহ দ্রুত সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া। স্মার্ট দেশের সকল সরকারি সেবাই হবে স্মার্ট। এই স্মার্ট সেবাপ্রাপ্তি সহজ করার জন্য সরকার বিভিন্ন হটলাইন নম্বর চালু করেছে।
হটলাইন সেবা এমন একটি ব্যবস্থা বা টেলিফোন পরিষেবা, যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেবাপ্রার্থীকে কমখরচে, দ্রুত ও সহজে সেবা প্রদান করে। সরকার কৃষি, স্বাস্থ্য, দুর্যোগ ও আইনি পরামর্শের মতো বিভিন্ন জরুরি সেবা হটলাইনে প্রদান করছে।
বাংলাদেশের জনগণের একটা বিশাল অংশ জীবনধারণের জন্য কৃষির উপর নির্ভরশীল। একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে কৃষি সেবাকে সহজে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য ‘কৃষি কল সেন্টার’ চালু করা হয়েছে। যেখানে স্বল্পখরচে ১৬১২৩ নম্বরে ফোন করে একজন কৃষক খুব সহজেই কৃষি-বিষয়ক পরামর্শ পেতে পারেন।
কৃষির মতো স্বাস্থ্য খাতও দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। জনগণের সুস্বাস্থ্য একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্ব শর্ত। স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়ন ও জনগণের উন্নত স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা না গেলে, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন সম্ভব নয়। তাই স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান পেতে সরকার স্বাস্থ্যসেবা হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে। ১৬২৬৩ নম্বরে কল করে যে-কেউ স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে সরাসরি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। এই সার্ভিস ২৪ ঘণ্টা চালু রয়েছে।
সরকার দেশের দুস্থ ও গরিব মানুষের আইনি পরামর্শ ও সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে হটলাইন নম্বর ১৬৪৩০ চালু করেছে। ২০১৬ সাল থেকে আইন ও বিচার বিভাগের অধীনে জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা এই সেবা দিয়ে আসছে। যেকোনো মোবাইল অপারেটর ও টিঅ্যান্ডটি নম্বর থেকে এই নম্বরে বিনা মূল্যে কল করে আইনি সেবা পাওয়া যাবে।
এখনও এদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। তাই নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সরকার ‘নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেল’ চালু করেছে, যার হটলাইন নম্বর ১০৯২১। নারীরা নির্যাতনের শিকার হলে, বখাটেদের আক্রমণের মুখে পড়লে অথবা অপমানিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সঙ্গে সঙ্গে এই নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাইতে পারেন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল কর্মসূচির আওতায় এই সেবা পরিচালিত হচ্ছে। এ নম্বরে কল করতে কোনো চার্জ দিতে হয় না। এই হটলাইন নম্বর সার্বক্ষণিক চালু থাকে।
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত নির্যাতিত ও বিপদাপন্ন শিশুদের জরুরি সহায়তা সেবা দিতে চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ চালু করা হয়েছে। সমাজসেবা অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা এই হেল্পলাইন পরিচালনা করছে। এই নম্বরে কল করতে কোনো চার্জ লাগে না।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় পরিচয়পত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে, নষ্ট হলে কিংবা ভুল-ভ্রান্তি হলে তা হালনাগাদের প্রয়োজন হয়। এসব বিষয়ে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে-কেউ ১০৫ নম্বরে ফোন করে জাতীয় পরিচয়পত্র-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন ২০১৫ সালে এই হটলাইন নম্বর চালু করে।
রেল সেবার মান উন্নয়নে বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি হটলাইন নম্বর চালু করেছে। যার নম্বর হলো ১৩১ । এই হটলাইন নম্বরে কল করে যে-কেউ ট্রেনের সময়সূচি ও টিকিট বাতিলসহ রেলওয়ের বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
এছাড়াও মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবা পেতে (সুখী পরিবার) ১৬৭৬৭ নম্বরে, ভূমিসেবা-সংক্রান্ত যেকোনো জিজ্ঞাসায় ১৬১২২ নম্বরে, ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে বিভিন্ন ভাতা বা অনুদান-সংক্রান্ত তথ্য ও পরামর্শ সেবা পেতে ১৬২৫৬ নম্বরে, দুর্যোগের আগাম বার্তা পেতে ১০৯০ নম্বরে, চোখের সামনে কোন দুর্নীতি ঘটলে ১০৬ নম্বরে, মানবাধিকার বিঘ্নিত হলে ১৬১০৮ নম্বরে, সরকারি তথ্য ও সেবা পেতে ৩৩৩ এবং বিটিসিএল সংক্রান্ত তথ্য জানতে ১৬৪০২ নম্বরে কল করে তাৎক্ষণিক সেবা গ্রহণ করা যাবে।
সরকার জনগণের জীবনমান উন্নয়নে এই হটলাইন সেবা চালু করেছে। নাগরিকগণ যাতে যেকোনো প্রয়োজনে জরুরি মুহূর্তে হটলাইন নম্বরে কল দিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত সরকারি সেবা পেতে পারেন, সেজন্য হটলাইন নম্বরগুলো ব্যাপক প্রচার করা প্রয়োজন। হটলাইন নম্বরগুলো সবার জানা থাকলে অনেক সমস্যা জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা সম্ভব হবে। (পি. ফি.)
লেখক : তথ্য সহকারী, আঞ্চলিক তথ্য অফিস, রংপুর