Home » প্রধান খবর » দেশের সমুদ্রাঞ্চলে গ্যাস হাইড্রেট ও মেরিন জেনেটিক রিসোর্সের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

দেশের সমুদ্রাঞ্চলে গ্যাস হাইড্রেট ও মেরিন জেনেটিক রিসোর্সের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

 

 

ঢাকা :

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমাদের সমুদ্রাঞ্চলে গ্যাস হাইড্রেট ও মেরিন জেনেটিক রিসোর্সের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে ২০১২ এবং ২০১৪ সালের মায়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্র সীমা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তির ফলে আমরা এখন এই অপার সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সুযোগ পেয়েছি।

আজ বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ড. মোমেন এসব কথা বলেন। এসময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স) রিয়াল এডমিরাল (অবঃ) মো. খুরশেদ আলম উপস্থিত ছিলেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ তার মূল ভূখণ্ডের ৮১ শতাংশ পরিমাণ রাষ্ট্রীয় জলসীমা অর্জন করে অর্থাৎ সমুদ্রে মোট ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার জলরাশির জলস্তম্ভ, সমুদ্রতল এবং অন্তমৃত্তিকায় বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এই অর্জন দেশের মেরিন ও উপকূলীয় অঞ্চলে সকল প্রকার সমুদ্র সম্পদ আহরণ, বাণিজ্যিক জাহাজ, জ্বালানি, পর্যটন ইত্যাদি ঘিরে কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধির নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নকে বেগবান করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক, বাণিজ্যিক ও পরিবেশগত প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ পূর্বক সুনির্দিষ্ট ০৯ টি খাত চিহ্নিত করে এবং সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের মতামত ও সুপারিশের ভিত্তিতে “সুনীল অর্থনীতি উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা” প্রণয়ন করে যা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে এবং বর্তমানে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীনে ব্লু-ইকোনমি সেল কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।”

ড. মোমেন বলেন, “বিগত সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে ‘EU-Bangladesh Joint Collaboration on Blue Economy’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সুনীল অর্থনীতি উন্নয়নের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ নিরূপণে মাঠ পর্যায়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। উক্ত সমীক্ষায় পেশাজীবী, মৎস্যজীবী, উপকূলীয় জনগণ, উদ্যোক্তা, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সহ সকল অংশীজনদের (stakeholders) মতামত অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং তা বিশ্লেষণপূর্বক সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা এবং সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করা হয়। পাশাপাশি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতামত এবং সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। এছাড়াও, দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়ার্কশপ এবং সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে নীতিনির্ধারক, প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী এবং সুশীল সমাজের সাথে সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে করণীয় দিকগুলো নিয়েও ব্যাপক আলোচনা হয়। উল্লিখিত সমীক্ষা/স্টাডি হতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নিম্নোক্ত ০৯ টি খাতের কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

১. সামুদ্রিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা;
২. সামুদ্রিক মৎস্যচাষ উন্নয়ন;
৩. বাণিজ্যিক নৌপরিবহনের উন্নয়ন;
৪. সমুদ্রভ্রমণ পর্যটনের বিকাশ সাধন;
৫.অফশোর ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও সুনীল বায়োটেকনোলজি গবেষণা ও উন্নয়ন;
৬. জাহাজ নির্মাণ ও রিসাইক্লিং শিল্প সম্প্রসারণ;
৭. স্থিতিশীল জীবিকার জন্য ম্যানগ্রোভের বাস্ত্তসংস্থানগত সেবা;
৮. সামুদ্রিক দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ;
৯. মেরিন স্পেশিয়াল প্ল্যানিং বাস্তবায়ন।

এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে, অফশোর জ্বালানি ও সুনীল বায়োটেকনোলজি (Offshore Energy and Blue Biotechnologies) গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সমুদ্রাঞ্চলে গ্যাস হাইড্রেট ও মেরিন জেনেটিক রিসোর্স বিশেষতঃ Seaweed-এর সম্ভাবনা, উপস্থিতি, প্রকৃতি ও মজুদ নির্ণয়ের জন্য দুটি গবেষণা কার্যক্রম যথাক্রমে যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসের সহায়তায় সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।”

প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম বাংলাদেশে সামুদ্রিক Seaweed থেকে বিশেষ ধরণের গবেষণালব্ধ প্রাপ্তির তথ্য তুলে ধরে বলেন, “সুনীল অর্থনীতি উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা”-এর আলোকে Blue Biotechnology খাত উন্নয়নের জন্য রিয়াল এডমিরাল (অবঃ) মো. খুরশেদ আলমের নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট, নেদারল্যান্ডস্ সরকারের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকায় Marine Genetic Resource (MGR)-যা সমুদ্রের প্রাণিজ ও উদ্ভিদ সংক্রান্ত সকল সম্পদকে বুঝায় এর উপস্থিতি, সার্বিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তথা বাণিজ্যিকীকরণ যাচাইয়ের লক্ষ্যে বিগত ০২ বছর যাবৎ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।”

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের প্রতিনিধিসহ নেদারল্যান্ডস্ ভিত্তিক গবেষক ২০২০ সালে বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকায় মাঠ পর্যায়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। উক্ত গবেষণা হতে বাংলাদেশের একান্ত অর্থনৈতিক এলাকা (EEZ)-এ MGR-এর সার্বিক অবস্থান চিহ্নিত করা (Mapping), বিবিধ প্রজাতি চিহ্নিত করাসহ অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করেন। সেই ফলাফলের ভিত্তিতে বাংলাদেশে ২২০ প্রজাতির Seaweed, ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৬ প্রজাতির কাঁকড়া, ৬১ প্রজাতির সি-গ্রাস ইত্যাদি চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীতে এ সকল প্রজাতির উপর প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি টেস্ট নেদারল্যান্ডসে সম্পন্ন করা হয়। কোভিড-১৯ জনিত উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গবেষণা কার্যক্রমে সাময়িক বিরতির পর ২০২১ সালে তা পুনরায় শুরু হয়। উক্ত কার্যক্রমে বিশেষ করে বাংলাদেশে Seaweed এর সম্ভাবনা ও বাণিজ্যিকীকরণের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। গবেষণালব্ধ ফলাফলে প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশে প্রাপ্ত বহু সংখ্যক প্রজাতির Seaweed-এর মধ্যে কয়েকটি প্রজাতির ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে, যা বাংলাদেশের Blue Economy-তে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম। বাংলাদেশে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট প্রজাতির কিছু Seaweed-এর নিমোক্ত ৫টি Industrial application চিহ্নিত করা হয়ঃ
ক। Fish Feed: বাংলাদেশে প্রাপ্ত কিছু প্রজাতির Seaweed-এ প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে যা Fish Feed-এর প্রোটিনের Source হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এবং Fish Feed-এর জন্য আমদানিকৃত Fish oil-এর বিকল্প হতে পারে, যার বাজার অত্যন্ত ব্যাপক।
খ। Animal Feed: বাংলাদেশে প্রাপ্ত কিছু প্রজাতির Seaweed-এ প্রচুর পরিমাণ Fatty acid রয়েছে যা Animal Feed-এর মান বৃদ্ধিতে ও প্রাণির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে Animal Feed-এর বিশাল বাজার রয়েছে।
গ। Food Additive: বাংলাদেশে প্রাপ্ত কিছু প্রজাতির Seaweed-এ প্রচুর পরিমাণ Agar-Agar রয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের Food industry-তে বর্তমানে Agar-Agar আমদানি করতঃ প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া, Seaweed সরাসরি বা Process করে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য মানুষ খাবারের সাথে গ্রহণ করছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের Food industry সমূহে Processed Seaweed এবং Agar-Agar এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ।
ঘ। Bulk Cosmetics Ingredient: বাংলাদেশের Seaweed-এ প্রচুর gelling agent রয়েছে যা বাংলাদেশের cosmetics industry-তে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে আমদানি করতঃ ব্যবহৃত হচ্ছে।

ঙ। High Value Cosmetics Ingredient: বাংলাদেশের Seaweed-এ প্রচুর পরিমাণে High value ingredients রয়েছে যা Skin care product সহ বহুবিধ cosmetics product তৈরিতে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।

তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সামুদ্রিক Seaweed থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন ও পরিচালনার জন্য Hatchery, Farming, Processing Plant এবং Industrial application প্রয়োজন হবে।

বাংলাদেশে Seaweed-এর উৎপাদন পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে অতি সহজেই করা সম্ভব। Seaweed-এর চাষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ উপকূলীয় এলাকা রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে। Seaweed-এর চাষ বাংলাদেশের উপকূলীয় জনগণের জন্য সহজ ও নিরাপদ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে সক্ষম, যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীকর্মির সহজ কর্মসংস্থান হতে পারে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার Blue Economy কার্যক্রম গ্রহণের পর সরাসরি সমুদ্র সম্পদ থেকে নতুন বাণিজ্যিক সম্পদ আহরণের একটি যুগান্তকারী অর্জনে সক্ষম হতে যাচ্ছি। এ প্রেক্ষিতে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে, আগ্রহী ও যোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান/ উদ্যোক্তাকে বাংলাদেশের Seaweed এর সম্ভাবনাময় বিবিধ খাতে কার্যকরী বিনিয়োগ/ অংশগ্রহণ করানো। উল্লেখ্য, উক্ত কার্যক্রম সফল করার লক্ষ্যে যোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান/ উদ্যোক্তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট কর্তৃক প্রদান করা হবে। আমরা প্রত্যাশা করব, যে সকল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান Seaweed-কে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন তারা তাদের লাভের একটি অংশ বাংলাদেশের উপকূলীয় জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে ব্যবহার করবেন।”

প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স) রিয়াল এডমিরাল (অবঃ) মো. খুরশেদ আলম বাংলাদেশের সমুদ্রাঞ্চলে গ্যাস হাইড্রেট এর উপস্থিতি, অবস্থান, প্রকৃতি ও মজুদ নির্ণয়ের লক্ষ্যে সম্পাদিত ডেস্কটপ স্টাডি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে ২০১৮ সালে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অধিকৃত জলসীমায় সমুদ্রে ও তলদেশে গ্যাস-হাইড্রেট এর উপস্থিতি, অবস্থান, প্রকৃতি ও মজুদ নির্ণয়ের লক্ষ্যে পূর্বে সম্পাদিত বিভিন্ন জরিপসমূহ হতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তরের অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রতিনিধিগণের সমন্বয়ে মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিবের নেতৃত্বে একটি ডেস্কটপ স্টাডি গ্রুপ গঠন করা হয়েছিল। গ্যাস হাইড্রেটের ডেস্কটপ স্টাডি মূলতঃ সমুদ্রে যে সকল অঞ্চলে ইতোমধ্যে জরিপ করা হয়েছে সে সকল অঞ্চলের তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্রাঞ্চলে গ্যাস হাইড্রেটের উপস্থিতি সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়াকে বুঝায়। পরিপূর্ণ ধারণা পেতে আমাদের সম্পূর্ণ সমুদ্রাঞ্চলে সিসমিক জরিপের প্রয়োজন ছিল যা অনেক ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। তাই আমরা ইতোমধ্যে সম্পন্নকৃত সিসমিক জরিপের উপর ভিত্তি করেই এই ডেস্কটপ স্টাডি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।”

মেরিটাইম ইউনিটের সচিব বলেন, “২০১১ সালে জাতিসংঘে মহীসোপানের সীমানা নির্ধারণ বিষয়ক কমিশন-এ বাংলাদেশের পেশকৃত মহীসোপানের দাবি সম্বলিত সাবমিশনটি প্রস্তুতের প্রাক্কালে বাংলাদেশ সরকার ২০০৭-২০০৮ সালে বঙ্গোপসাগরে ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৩৫০০ লাইন কিঃ মিঃ এবং ২০১০ সালে একটি ডাচ প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় প্রায় ৩০০০ লাইন কিঃ মিঃ সিসমিক ও ব্যাথিম্যাট্রিক জরিপ সম্পন্ন করে। এ জরিপসমূহের মাধ্যমে ৩৫০ নটিক্যাল মাইলের ভিতরে মহীসোপানে ৬৫০০ লাইন কিঃ মিঃ পর্যন্ত সমুদ্রাঞ্চলে বিদ্যমান সম্পদ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরী তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে যা বাপেক্স, পেট্রোবাংলা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটে সংরক্ষিত রয়েছে। এ সকল জরিপের তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করেই ডেস্কটপ স্টাডিটি পরিচালনা করা হয়। ডেস্কটপ স্টাডি গ্রুপ গঠনের পর যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটনে অবস্থিত ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফি সেন্টার সহ পেট্রোবাংলা, বাপেক্স এবং স্থানীয় বিশেষজ্ঞগণের যৌথ প্রয়াসে বিগত ০৩ বছর নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। এমনকি কোভিড-১৯ জনিত অচলাবস্থায়ও এই স্টাডি গ্রুপ কাজ করে গেছে। উক্ত স্টাডিটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অধিকৃত জলসীমায় সমুদ্রে ও তলদেশে গ্যাস-হাইড্রেট-এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে এবং এর অবস্থান, প্রকৃতি ও মজুদের ব্যাপারে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেছে।
গ্যাস হাইড্রেট তথা মিথেন গ্যাস মূলতঃ উচ্চচাপ ও নিম্ন তাপমাত্রায় গঠিত জমাট বরফ আকৃতির এক ধরণের কঠিন পদার্থ যা স্তূপীকৃত বালির ছিদ্রের ভেতরে ছড়ানো স্ফটিক (ice) আকারে অথবা কাদার তলানিতে ক্ষুদ্র পিন্ড, শীট বা রেখা আকারে বিদ্যমান থাকে। মহীসোপানের প্রান্তসীমায় (Continental Margin) ৩০০ মিটারের অধিক গভীরতায় সমুদ্রের তলদেশের নীচে গ্যাস হাইড্রেট পানি ও মাটির চাপে মিথেন বা স্ফটিক (ice) রূপে বিরাজ করতে দেখা যায় যা সাধারণত ৫০০ মিটার গভীরতায় স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। স্থিতিশীল গ্যাস হাইড্রেট সমৃদ্ধ এ অঞ্চলটি সমুদ্রের তলদেশ (Seafloor) থেকে প্রায় ১০ থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে বিশেষ করে ভারতের কৃষ্ণ-গোদাভারী এবং মহানন্দা বেসিনে বিপুল পরিমাণ গ্যাস হাইড্রেট এর মজুদের সম্ভাবনা বিষয়ে ভারত ইতিমধ্যে নিশ্চিত হয়েছে। কৃষ্ণ-গোদাভারী এবং মহানন্দা বেসিন এলাকায় প্রতিবছর প্রায় ১-২ বিলিয়ন টন মিশ্রিত তলানি জমা হয়। ভারত ইতিমধ্যে কৃষ্ণ-গোদাভারী এবং মহানন্দা বেসিনে এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে তিন (০৩)টি স্থানে কূপ খনন করেছে। মহানন্দা বেসিনে সাগরের তলদেশে ২০৫ মিটার নীচে ২৫ মিটার পুরু একটি স্তরে প্রায় ১৫% প্রাকৃতিক গ্যাস হাইড্রেট এর উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশের পূর্বে সম্পাদিত বিভিন্ন জরিপসমূহ হতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ পূর্বক গ্যাস হাইড্রেটের ভলিউম এবং এই গ্যাস হাইড্রেটটিতে থাকা মিথেনের ভলিউম অনুমান করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই সিসমিক রিমোট সেন্সিং স্টাডিটি কেবলমাত্র গ্যাস হাইড্রেটের সম্ভাব্য উপস্থিতি এবং বিতরণের একটি ইঙ্গিত দিতে পারে। সিসমিক লাইনের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে শুধুমাত্র বাংলাদেশের EEZ-এ ০.১১ থেকে ০.৬৩ tcf (ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট) সম্ভাব্য প্রাকৃতিক গ্যাস হাইড্রেট জমার অনুমান পাওয়া গেছে যা ১৭-১০৩ tcf (ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট) প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদের সমতুল্য। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের EEZ ও মহীসোপানের সকল এলাকার পূর্নাঙ্গ সিসমিক জরিপ সম্পন্ন করা হলে প্রকৃত মজুদ নিরূপন করা সম্ভবপর হবে।”

তিনি বলেন, “এই সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে বাংলাদেশের EEZ এর উল্লেখযোগ্য এলাকায় প্রাকৃতিক গ্যাস হাইড্রেট-এর উপস্থিতি থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এ বিপুল পরিমাণ গ্যাস হাইড্রেট এর উপস্থিতি ও মজুদের সমূহ সম্ভাবনা আগামী শতকে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের সামগ্রিক চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়। বলা বাহুল্য, ১ সেমি৩ (cm3) স্ফটিক (ice)-এ আনুমানিক ১৬৪ মি৩ (m3) মিথেন গ্যাস মজুদ থাকে। মিথেন গ্যাস অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির (Fossil Fuel) তুলনায় অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। তবে গ্যাস-হাইড্রেট উত্তোলনের প্রযুক্তি (Technology) সহজলভ্য না হওয়ায় অনেক উন্নত দেশ এখনও গ্যাস-হাইড্রেট উত্তোলন শুরু করতে পারেনি। আমরা আশা করছি যে, অচিরেই এই প্রযুক্তি সহজলভ্য হবে এবং আমরা বিভিন্ন উন্নত দেশের কাছ থেকে প্রযুক্তি নিয়ে গ্যাস হাইড্রেট উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারব ।
ইতোপূর্বে সম্পাদিত জরিপ এলাকার ৬৫০০ কিমি লাইন সীমানার তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে এই স্টাডি পরিচালিত হয়েছে। আমাদের সমুদ্র সীমার অন্যান্য অঞ্চলে সাইসমিক ও ব্যাথিম্যাট্রিক জরিপ পরিচালনা করে সেসব এলাকায় গ্যাস হাইড্রেটের উপস্থিতি, অবস্থান, প্রকৃতি ও মজুদ নির্ণয় করা প্রয়োজন। এছাড়াও, প্রকৃত মজুদের পরিমাণ নির্ণয় করতে জন্য হাইড্রেট জমার ড্রিলিং এবং মূল নমুনা বিশ্লেষণের সাথে জড়িত আরও সিসমিক জরিপের প্রয়োজন হবে এবং গ্যাস হাইড্রেটে উত্তোলনের সাথে কোন পরিবেশগত ঝুঁকি জড়িত কিনা এ ব্যাপারে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
আমাদের স্টাডি হতে প্রাপ্ত ফলাফল পূর্ণাংগ সিসমিক জরিপ সম্পাদনের মাধ্যমে প্রকৃত মজুদের পরিমাণ ও উপস্থিতি নির্ণয় এবং পরিবেশগত প্রভাব ও তা প্রশমনের কৌশল নির্ণয়ের জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে প্রেরণ করা হবে । এছাড়া, এই স্টাডিটি একটি বিশ্বখ্যাত গবেষণা জার্নালেও প্রকাশিত হবে।

আরও পড়ুন :

 

বিভাগীয় কমিশনার, ঢাকা এর কার্যালয়ে কর্মশালা

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির বাণী

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর বাণী

বড়দিন ও নতুন বছরকে রাঙিয়ে তুলুন শেরাটন ঢাকার সাথে, থাকছে কিডজ পার্টি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথম থেকেই এই স্টাডির ব্যাপারে খুবই ইতিবাচক ছিলেন এবং সকল ধরণের সমর্থন দিয়ে গেছেন। নিঃসন্দেহে, এই স্টাডি হতে প্রাপ্ত ফলাফল বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বিশেষ করে আগামী শতকে জ্বালানি সংকট নিরসনে এবং পরিবেশবান্ধব জ্বালানির উৎস হিসেবে গ্যাস হাইড্রেটের এই বিশাল মজুদ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। আমরা আশা করছি অতি দ্রুত এই গ্যাস হাইড্রেট উত্তোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ জ্বালানি ক্ষেত্রে নতুন যুগে প্রবেশ করবে।”
-প্রেস বিজ্ঞপ্তি

0 Shares