ত্রিশাল (ময়মনসিংহ): ময়মনসিংহের ত্রিশালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে চরম হযবরল পরিস্থিতি। কোথাও পরীক্ষা হচ্ছে, কোথাও আংশিক, আবার কোথাও একেবারেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। পরীক্ষা হবে কি হবে না—এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রতিদিনই সন্তানদের নিয়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে অভিভাবকদের। ফলে শিক্ষার্থী–অভিভাবক উভয়ের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
নির্ধারিত রুটিন অনুযায়ী গতকাল ১ ডিসেম্বর (সোমবার) ইংরেজি পরীক্ষা দিয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। আর আজ মঙ্গলবার ছিল বাংলা পরীক্ষার সিডিউল।
যেসব শিক্ষার্থী নির্ধারিত তারিখে পরীক্ষা দিতে পারেনি, তারা কবে সুযোগ পাবে—এ নিয়ে রয়েছে দুশ্চিন্তা। একইসঙ্গে ভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নিলে মূল্যায়নে বৈষম্য তৈরি হতে পারে; আবার একই প্রশ্নে পরীক্ষা নিলে তা প্রশ্নফাঁসের ঝুঁকি তৈরি করবে বলে অভিভাবকদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
অভিভাবক শাকিল আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সকালে সন্তানকে নিয়ে স্কুলে যাই, গিয়ে দেখি পরীক্ষা নেই! আগে যদি জানানো হতো, তাহলে এত দৌড়ঝাঁপ করতে হতো না। এখন কবে পরীক্ষা হবে—কেউ নিশ্চিত বলতে পারে না। তাই নিয়মিতই স্কুলে যেতে হচ্ছে।”
বেতন–গ্রেড উন্নীতকরণসহ তিন দফা দাবি আদায়ে দ্বিতীয় দিনের মতো পরীক্ষাবর্জন কর্মসূচি পালন করছেন সহকারী শিক্ষকরা। ফলে উপজেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার হল ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
শিক্ষকদের অভিযোগ—দীর্ঘদিন ধরে তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে কর্তৃপক্ষ শুধু আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি কোনো দাবিরই। তাই বাধ্য হয়ে পরীক্ষাবর্জনের পথ বেছে নিতে হয়েছে বলে তারা জানান।
ত্রিশাল উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এমদাদুল হক মানিক বলেন,“শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন বিশৃঙ্খলা কাম্য নয়। পরীক্ষা বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিতে ফেলে দাবি আদায়ের চেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে চলতে থাকলে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব শিশুদের ওপর পড়বে। বিষয়টি সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া উচিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।”
গতকালের পরীক্ষার তথ্য জানতে চাইলে তা এড়িয়ে গিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নীলুফার হাকিম জানান, “উপজেলার ১৮১টি স্কুলের মধ্যে আজ ১৪টি স্কুলে সব শ্রেণির পরীক্ষা হয়েছে। বাকি বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৪৯টি স্কুলে প্রথম শিফটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যান্য বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি।”
বাদ পড়া পরীক্ষার মূল্যায়ন বা নতুন প্রশ্ন তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি, তাদের মূল্যায়ন কীভাবে করা হবে—তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার বিষয়। আমরা নিজেদের সিদ্ধান্তে কিছু করব না; যে নির্দেশনা আসবে, সেভাবেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
উপজেলায় শ্রেণিভিত্তিক এক প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার নিয়ম থাকলেও পরীক্ষাবর্জনের কারণে যেসব বিদ্যালয়ে পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে, সেখানে পরবর্তীতে ভিন্ন প্রশ্ন তৈরি করতে হলে মূল্যায়নে বৈষম্য তৈরি হতে পারে। একই প্রশ্ন পুনরায় ব্যবহার করলে প্রশ্নফাঁসের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। এসব বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরা।
Newturn24.com Latest News Portal