Home » আন্তর্জাতিক » ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কলোরাডোতে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা রাজ্য সুপ্রিম কোর্টের

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কলোরাডোতে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা রাজ্য সুপ্রিম কোর্টের

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের বিদ্রোহ বিষয়ক একটি ধারার প্রয়োগ করে বলেছে, ওই রাজ্যে আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প যোগ্য হবেন না।বিবিসি

আদালত যে রুল জারি করেছে তার মর্মার্থ হলো ট্রাম্প ওই রাজ্যের জন্য আর প্রার্থী হবার যোগ্য নন। আদালতে সাতজন বিচারকের মধ্যে চারজন এই রায়ের পক্ষে মত দিয়েছেন, তিনজন বিপক্ষে।

কোন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থীকে অযোগ্য ঘোষণার জন্য দেশটির সংবিধানের বিধান দেশটির ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো প্রয়োগ করা হলো।

অবশ্য আরও কয়েকটি রাজ্যের ব্যালট পেপার থেকে ট্রাম্পের নাম বাদ দেয়ার উদ্যোগ আগেও নেয়া হয়েছিলো কিন্তু সেগুলো সফল হয়নি।

কলোরাডো রাজ্য সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার যে সিদ্ধান্ত নিলো তা নিয়ে আগামী মাসে আপিল শুনানি হতে পারে। তবে কলোরাডোর বাইরে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না।

রাজ্যের শীর্ষ আদালত তার রুলিং এ লিখেছে: “আমরা হালকাভাবে এ উপসংহারে আসিনি। আমরা এর মাত্রা ও আমাদের দিকে আসা প্রশ্নগুলোর ওজন সম্পর্কে সচেতন ছিলাম”।

“মানুষের প্রতিক্রিয়ার কথা চিন্তা না করে আইন আমাদের যে ম্যান্ডেট দিয়েছে সেটি এবং ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে আইনের প্রয়োগের পবিত্র দায়িত্ব প্রয়োগে আমরা সচেতন ছিলাম”।

এর আগে কলোরাডোর একজন বিচারক এ বিষয়ে যেই সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন তার উল্টো সিদ্ধান্তই নিলো রাজ্য সুপ্রিম কোর্ট।

 

ওই বিচারক তখন তার নির্দেশে বলেছিলেন ১৪তম সংশোধনীর বিদ্রোহ বিষয়ক ধারাটি প্রেসিডেন্টদের বিষয়ে প্রয়োগযোগ্য নয়, কারণ ওই ধারায় কারও নাম উল্লেখ নেই।

যদিও সেই একই নিম্ন আদালত ২০২১ সালের দাঙ্গায় ট্রাম্প বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিলেন বলে প্রমাণ পেয়েছিলো। ট্রাম্পের অনুসারীরা সেদিন কংগ্রেস ভবনে হামলা করেছিলো। ওই সময় আইন প্রণেতারা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনের ফলকে আইনি স্বীকৃতি দেবার প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছিলেন।

কলোরাডো সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত অবশ্য আগামী ৪ জানুয়ারির আগে কার্যকর হবে না। রাজ্যের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারির ব্যালট ছাপানোর প্রায় কাছাকাছি সময় এটি।

ট্রাম্পের প্রচার বিভাগের মুখপাত্র স্টিভেন চিয়াং আদালতের এই রায়কে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ আখ্যায়িত করে বিচারকদের তীব্র সমালোচনা করেছেন, যারা সবাই ডেমোক্র্যাট গভর্নরের দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত।

“রাজ্যের ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতারা মস্তিষ্ক বিকৃতিতে ভুগতে শুরু করেছেন, কারণ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্প জরিপগুলোতে এগিয়ে আছেন,” বলছিলেন চিয়াং।

“তারা ব্যর্থ বাইডেনের প্রেসিডেন্সিতে আস্থা হারিয়ে এখন আগামী নভেম্বরের পরাজয় ঠেকাতে আমেরিকান ভোটারদের থামাতে চাইছে,” তিনি বলেন।

চিয়াং বলেন ট্রাম্পের আইনজীবী দল শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে আপিল করবেন।

 

তবে বিষয়টি যারা আদালতে এনেছিলো সেই সিটিজেনস ফর রেসপনসিবিলিটি এন্ড এথিকস ইন ওয়াশিংটন কলোরাডো রাজ্য আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।

“এটি শুধু ঐতিহাসিকই ও যৌক্তিকই নয়, বরং দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতকে সুরক্ষা দিতেও এটি প্রয়োজনীয় ছিলো,” এক বিবৃতিতে বলছিলেন গ্রুপটি প্রেসিডেন্ট নোয়াহ বুকবিন্ডার।

এর আগে হ্যাম্পশায়ার, মিনেসোটা ও মিশিগানে একই ধরনের মামলা সফল হয়নি।

আমেরিকান সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী গৃহীত হয়েছিলো দেশটির গৃহযুদ্ধের পর। মূলত তখন আগের সরকারের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঠেকাতে এই সংশোধনীটি নেয়া হয়েছিলো।

কনফেডারেট প্রেসিডেন্ট জেফারসন ডেভিস ও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সান্ডার স্টিফেনস এর বিরুদ্ধে এটা প্রয়োগ করা হয়েছিলো।

ট্রাম্প গত নির্বাচনে কলোরাডো রাজ্যে বড় ব্যবধান হেরেছিলেন। তবে আরও কোন রাজ্য যদি কলোরাডোর মতো সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য ট্রাম্পের উদ্যোগ সমস্যায় পড়তে পারে।

কলোরাডোর আদালতে গত মাসে প্রায় এক সপ্তাহের বিচারকালে ট্রাম্পের আইনজীবীরা বলেছিলেন ট্রাম্প অযোগ্য হতে পারে না কারণ ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার দায় তার নয়।

কিন্তু আদালতের রুলিংয়ে বেশিরভাগ বিচারকই এর সাথে একমত হননি।

 

তারা বলেছেন ওই দাঙ্গার আগে মি. ট্রাম্প ‘লড়াই করার জন্য তার সমর্থকদের আহবান জানিয়েছেন এবং তাতে তার সমর্থকরা সাড়া দিয়েছিলো”।

রুলিংয়ে ভিন্নমত পোষণকারী বিচার কার্লোস স্যামোরের যুক্তি ছিলো ‘যথাযথ আইন না মেনে কাউকে পাবলিক অফিসের অধিকার থেকে সরকার বঞ্চিত করতে পারে না’।

“এমনকি আমরা যদি নিশ্চিতও হই যে একজন অতীতে ভয়াবহ কাজ করেছেন, তারপরেও বিদ্রোহের ক্ষেত্রে কাউকে অযোগ্য ঘোষণার আগে কিছু প্রক্রিয়াগত বিষয় আছে,” তিনি লিখেছেন।

রিপাবলিকান আইন প্রণেতারাও আদালতের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। কংগ্রেস স্পিকার মাইক জনসন বলেছেন একে ‘দলীয় পক্ষপাতমূলক আক্রমণ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

“রাজনৈতিক মতাদর্শ যাই হোক না কেন, কোন ভোটারকে সাবেক প্রেসিডেন্টকে সমর্থন দেয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সঠিক নয়, যিনি প্রতিটি প্রাইমারি জরিপে এগিয়ে আছেন”।

. ট্রাম্প এখন চারটি ফৌজদারি মামলা মোকাবেলা করছেন। এর মধ্যে একটি ফেডারেল ও আরেকটি জর্জিয়া রাজ্যের মামলা নির্বাচন সম্পর্কিত।

0 Shares