মিজ়োরামের রাজধানী আইজ়ল থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে বাকতাওয়াং গ্রাম। সেখানে ১০০ ঘরের একটি চারতলা ‘প্রাসাদে’ ৩৯ জন স্ত্রী, ৯৪ জন সন্তান-সন্ততি নিয়ে বাস করতেন জিয়ংহাকা ওরফে জিয়ন।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
উত্তর-পূর্বের রাজ্য মিজ়োরাম। পাহাড়ি এই রাজ্যের বাকতাওয়াং গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন জিয়ংহাকা ওরফে জিয়ন। সেই গ্রামের অধিকাংশ অধিবাসীই ছিলেন জিয়নের পরিবারের সদস্য। ১০০ ঘরের একটি চারতলা ‘প্রাসাদে’ পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতেন জিয়ন। পরিবার বলতে মাত্র ৩৯ জন স্ত্রী, ৯৪ জন সন্তান-সন্ততি!আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
প্রথম বিয়ে ১৭ বছর বয়সে। অর্থাৎ, সাবালক হওয়ার আগেই সংসার পেতেছিলেন জিয়ন। জিয়নের সংসারে ধীরে ধীরে স্থান করে নিয়েছিলেন আরও ৩৮ জন তরুণী। ১৯৪৫ সালে জন্ম হয় তার। জিয়নের প্রথম স্ত্রী জাথিয়াঙ্গি ছিলেন তার থেকে তিন বছরের বড়। তার পর থেকে একের পর এক বিয়ে করে গিয়েছেন তিনি।
মিজ়োরামের রাজধানী আইজ়ল থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরের গ্রামটিতে জিয়ন তার স্ত্রীদের নিয়ে একই ছাদের নিচে সংসার করতেন। প্রতি স্ত্রীর জন্য পৃথক কক্ষের ব্যবস্থা করেছিলেন জিয়ন। তিনি নিজেও তাদের সঙ্গে বাস করতেন ওই একই বাড়িতে। তার ঘরের লাগোয়া ঘরেই থাকতেন স্ত্রীরা।
শুধু ৩৯ জন স্ত্রী নন, জিয়ন রেখে গিয়েছেন ৯৪ জন সন্তান, ১৪ জন পুত্রবধূ এবং ৩৩ জন নাতি-নাতনি। রেখে গিয়েছেন বলার কারণ হল ২০২১ সালে ৭৬ বছর বয়সে প্রয়াত হন ‘বিশ্বের বৃহত্তম পরিবার’-এর কর্তা জিয়ন।
জিয়নের ডায়াবিটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ছিল। তিন দিন ধরে বাকতাওয়াং গ্রামে বাড়িতেই চিকিৎসা চলেছিল তার। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে আনার কিছু ক্ষণ পরেই তার মৃত্যু ঘটে।
অনেক সংবাদমাধ্যমের দাবি, বিশ্বে আর কারও এত জন স্ত্রী নেই। বাকতাওয়াং গ্রামে তার চারতলা বাড়িটি পর্যটকদের কাছে একটা আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠেছে। ২০১১ ও ২০১৩ সালে জনপ্রিয় পত্রিকা ‘রিপ্লে’জ় বিলিভ ইট অর নট’-এ স্থান পেয়েছিল এই পরিবার।
এক জনপ্রিয় ভারতীয় পণ্যের বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছিল জিয়নের পরিবার। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জীবনযাত্রা, জিয়নের অন্দরমহলের চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল সেই বিজ্ঞাপনে।
জিয়নের পরিবারটি ‘চানা পাওল’ নামের একটি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। এই সম্প্রদায়ের ২ হাজার অনুসারী রয়েছেন। এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জিয়নেরই ঠাকুরদা। ১৯৪২ সালে সম্প্রদায়টির গোড়াপত্তন হয়। চানা সম্প্রদায়ে বহুবিবাহের অনুমতি রয়েছে।
জিয়নের দাদুর পরে বংশানুক্রমিক ভাবে সম্প্রদায়ের নেতা হন জিয়নের বাবা। ১৯৯৭ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর, উত্তরসূরি হিসেবে এই সম্প্রদায়ের নেতা হন জিয়ন। তিনি এক বছরের মধ্যে ১০ জন নারীকে বিয়ে করেন। ২০০৫ সালে শেষ বারের মতো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন জিয়ন। তার কনিষ্ঠতম স্ত্রীর বয়স ছিল ২৫ বছর।
‘ছুয়ান থার রান’ বা ‘নিউ জেনারেশন হাউস’ নামের যে বাড়িতে জিয়ান বাস করতেন সেখানে স্ত্রীদের থাকার ঘরের বন্দোবস্তের নিয়ম ছিল অদ্ভুত। যে স্ত্রীকে তিনি সবচেয়ে শেষে বিয়ে করেছিলেন তার ঘর ছিল জিয়নের ঘরের সবচেয়ে কাছে। যাকে তিনি প্রথম বিয়ে করে সংসার পেতেছিলেন তার ঘর ছিল সবচেয়ে দূরে।
জিয়নের ঘরের দ্বার অবশ্য সকলের জন্য অবারিত ছিল। প্রবেশ করার অনুমতি ছিল সকলের। জিয়নের ওই বিশাল বাড়িতে স্ত্রীরা ছাড়াও জিয়নের সন্তানরা বসবাস করেন। থাকেন পুত্রবধূ এবং নাতি-নাতনিরাও। পরিবারে সকলের আলাদা ঘর থাকলেও রান্নাঘর কিন্তু একটাই।
পরিবারের পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে জিয়নের প্রথম স্ত্রীর উপরই। তার কঠোর নিয়ম ও তত্ত্বাবধানে পরিবারের সমস্ত কাজকর্ম হয়। পরিবারের রান্না একসঙ্গেই হয়। ঘরদোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের দায়িত্ব জিয়নের মেয়েদের।
এক দিনের খোরাকের জন্য মোটামুটি ৬০ কেজি আলু এবং ৪০টির মতো গোটা মুরগি লাগে গোটা পরিবারের। প্রতি দিন প্রায় ৯০ কেজি চালের ভাত রান্না হয়। জিয়নের প্রত্যেক স্ত্রী পালাক্রমে রান্না করেন। বাড়ির ছেলেরা সবাই চাষের কাজ আর পশুপালন করে থাকেন।
সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে ‘লন্ডন ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’, ২০১১ সালে ‘ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অ্যাকাডেমি’ ও ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ জিয়নের পরিবারকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম পরিবার’ হিসেবে উল্লেখ করেছিল। কিন্তু প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকার জন্য পরিবারের কর্তা জিয়ন সেই খেতাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বলে জানা যায়।
২০১১ সালে রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জিয়ন জানিয়েছিলেন তিনি চান তার পরিবারের পরিধি আরও বৃদ্ধি পাক। বিয়ে করার জন্য যে কোনও সীমা অতিক্রম করতে ইচ্ছুক ছিলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি নিজেকে ভাগ্যবান মানুষ বলে মনে করি। কারণ আমাকে দেখাশোনার করার জন্য ও যত্ন নেয়ার জন্য প্রচুর মানুষ রয়েছে। তারা সকলেই আমার নিজের পরিবার।’’