Home » জাতীয় » যাদুকাটার বালু তিনটি উপজেলার হাওর ও আমন জমি

যাদুকাটার বালু তিনটি উপজেলার হাওর ও আমন জমি

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা ও মাহারম নদীর উজান মুখে বালু জমে যাদুকাটা নদীর নাব্যতা হারিয়ে পাহাড়ি ঢলে বালু পরে ফসলি জমি নষ্ট ও নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের শংকা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে তাহিরপুর, বিশ্বম্বরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার অনেকগুলো হাওর, যাদুকাটা নদীর আশপাশের প্রায় ৪০ টি গ্রামের আমন ফসলি জমি ও বসতি ঢলে ভেসে আসা যাদুকাটার বালু পরে মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার আশংকা করছেন ঐ এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ। সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায় যে, যাদুকাটা ও মাহারাম নদীর মুখে বালু জমে নদীর নাব্যতা নষ্ট হয়ে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে ঢলের পানিতে ভেসে আসা বালু চাপা পরে আশপাশের ফসলি জমি,বসতি ও নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের শংকা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় দুই বছর যাবৎ বালু উত্তোলন বন্ধ থাকায় যাদুকাটায় বালু জমে নদীর নাব্যতা নষ্ট হয়ে গেছে ফলে এই বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যে কোন জনপথ নদীগর্ভে বিলীন এবং হাজার হাজার হেক্টর আমন ও বোরো ফসলী জমি বালুর নিচে চাপা পড়ে নষ্ট হওয়ার শংকায় লক্ষ লক্ষ কৃষক শংকিত। অচিরেই ড্রেজিং বা অন্য কোন উপায়ে বালু না সরালে আশপাশের পরিবেশ ও জনজীবনের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফরিদুল হাসান জানান, এ ব্যাপারে মিটিংয়ে আমরা জেলা প্রশাসন এর সাথে কথা বলেছি, জানিয়েছি যাদুকাটার উৎস মুখের বালু খনন করে না সরালে ঐ এলাকার আমন ও বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন কতিপয় লোকের মামলার কারণে কিছু করা যাচ্ছে না। জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এ বিষয়ে যাদুকাটার বালু সারানোর চিন্তা আমাদের রয়েছে কিন্তু মামলা থাকার কারণে কিছু করা যাচ্ছে না। যাদুকাটার বালু না সরালে ফসলি জমির ক্ষতি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে মর্মে আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং সুপ্রিমকোর্টে মামলাগুলো নিস্পত্তির জন্য সলিসিটর বরাবরে পত্র প্রেরণ করেছি। সুনামগঞ্জ পাউবোর প্রকৌশলী সবিবুর রহমান জানান, আমি নিজে সরজমিনে পরিদর্শন করেছি। যাদুকাটা ও মাহারাম নদীর উৎস মুখে বালু জমে বর্তমানে নদীর নাব্যতা হারিয়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, বালু পরে ঐ এলাকাসহ হাওরের ফসলি জমি ও নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। তিনি আরও জানান পূর্বে জেলা প্রশাসন ইজারা প্রথার মাধ্যমে যাদুকাটার বালু উত্তোলন করত কিন্তু বর্তমানে শুনেছি একটি পক্ষ মামলা করে বালুমহাল ইজারা বন্ধ রেখেছে। খনন করে বালু সরানোর বিষয়ে আমরা আমাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী জানান, বোরো ফসলের স্বার্থে হাওরের পানি ধারন করার জন্য প্রায় ভরাট হওয়া নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনে রক্তি,বৌলাই নদীগুলো সরকার শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করে যাচ্ছে, কিন্তু মূল নদী যাদুকাটার উজানে যে পরিমাণ বালু জমেছে তা খনন না করলে খননকৃত রক্তি ও বৌলাই নদী ভরাট হবেই। তাছাড়া ঐসব এলাকার ফসলি জমির উপর বালু পরে কৃষি,জানমাল ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন জানান বিষয়টি আমরা বিভিন্ন সময় প্রশাসন,কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর,পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিগণের সাথে কথা বলেছি। সকল উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নলেজে বিষয়টি রয়েছে বলেও তিনি জানান। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য রেণু মিয়া জানান, যাদুকাটার বালু খনন করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসনের কাছে আমরা বার বার দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরও জানান, এই যাদুকাটার বালু দিয়ে সমগ্র দেশের উন্নয়ন কাজ চলে। বর্তমানে যাদুকাটায় শ্রমিকরা বালু উত্তোলন করতে পারছে না ফলে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

0 Shares