আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ফিলিপিন্সের মিন্দানাও অঞ্চলের উপকূলে ৭ মাত্রার ওপরের ভূমিকম্প আঘাত হানার পর কর্তৃপক্ষ সুনামির সতর্কতা জারি করে।
ফিলিপিন্সের ভূকম্পন সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে আঘাত হানা প্রাথমিক ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫।বিবিসি
তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) এবং ইউরো-ভূমধ্যসাগরীয় ভূকম্পন কেন্দ্র এর মাত্রা ৭ দশমিক ৪ বলে জানিয়েছে।
মিন্দানাও উপকূলে একের পর এক আফটারশক অনুভূত হয়েছে, যার মাত্রা ২ দশমিক ৬ থেকে ৪ দশমিক ৯ পর্যন্ত, বলে জানিয়েছে দেশটির ইনস্টিটিউট অফ ভলকানোলজি অ্যান্ড সিসমোলজি (ফিভোলক্স)।
ফিলিপিন্সের ভূকম্পন সংস্থা “জীবনের জন্য হুমকি” হয়ে দাঁড়াতে পারে এমন উচ্চতার ঢেউসহ “ধ্বংসাত্মক সুনামির” সতর্কতা জারি করে।
তবে ঘণ্টাখানেক পর ইউএস সুনামি ওয়ার্নিং সেন্টার জানায়, সুনামি সর্তকতা তুলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলো এ বিষয়ে ঘোষণা দেয়নি।
শুক্রবার সকালের এই ভূমিকম্পের পর ইন্দোনেশিয়ার কিছু অংশেও সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুলাওয়েসি এবং পাপুয়া অঞ্চলেও সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়। এই অঞ্চলগুলো হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানায় ইন্দোনেশিয়ার ভূ-পদার্থবিদ্যা সংস্থা।
ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্প ও সুনামি কেন্দ্রের প্রধান জানিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় ১৭ সেমি (৬ ইঞ্চি) পর্যন্ত সুনামি রেকর্ড করা হয়েছে।
“আমরা একে ছোট সুনামি বলি,” তিনি শূন্য দশমিক ৫ মিটার উচ্চতায় পৌঁছানো ঢেউয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন।
ইন্দোনেশিয়ার ভূকম্পন সংস্থা জানায়, উত্তর সুলাওয়েসির তালাউড দ্বীপপুঞ্জে ৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার থেকে ১৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত সুনামি ঢেউ রেকর্ড করা হয়েছে।
ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র মধ্য ও দক্ষিণ ফিলিপাইনের কিছু উপকূলীয় অঞ্চল থেকে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পরিস্থিতি নিরাপদ মনে হওয়ার পর অনুসন্ধান, উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা হবে বলে তিনি ফেসবুকে এক পোস্টে বলেছেন।
তিনি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের সব মানুষকে উঁচু স্থানে সরে যাওয়ার এবং কর্তৃপক্ষ নিরাপদ ঘোষণা না করা পর্যন্ত উপকূল থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
“যাদের সাহায্য প্রয়োজন তাদের সকলের কাছে পৌঁছাতে আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করছি,” মার্কোস জুনিয়র বলেছেন।
সুনামির শঙ্কা
জোয়ারের সময় সাগরের পানি যে পর্যন্ত উঠে আসে, তার চেয়ে তিন মিটার উচ্চতা পর্যন্ত সুনামির ঢেউ উঠতে পারে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।
প্যাসিফিক সুনামি ওয়ার্নিং সেন্টার থেকে একটি সতর্কতা দেখানো হয়, যেখানে সতর্ক করা হয় যে ফিলিপিন্সের কিছু উপকূলে সুনামির ঢেউ স্বাভাবিক জোয়ারের সমতল থেকে তিন মিটার বা ১০ ফুট পর্যন্ত উঁচুতে উঠতে পারে।
ইন্দোনেশিয়া এবং পালাউয়ের কিছু উপকূলে স্বাভাবিক জোয়ারের সমতল থেকে এক মিটার পর্যন্ত উঁচুতে ঢেউ উঠতে পারে।
প্রথম সুনামির ঢেউ এক ঘণ্টার মধ্যে আসতে পারে বলেও সেখানে উল্লেখ করা হয়।
সুনামির ঢেউ কয়েক ঘণ্টা ধরে স্থায়ী হতে পারে বলে ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
দেশের ইনস্টিটিউট অফ ভলকানোলজি অ্যান্ড সিসমোলজি (ফিভোলক্স) ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশগুলির উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী বাসিন্দাদের “অবিলম্বে উঁচু স্থানে সরে যেতে অথবা আরও অভ্যন্তরীণ স্থানে সরে যেতে” বলেছে।
ফিভোলক্স নৌকা মালিকদের তাদের নৌযানগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে উপকূল থেকে দূরে সরে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছে।
“এই সময়ের মধ্যে সমুদ্রে থাকা নৌকাগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গভীর জলে সমুদ্র সৈকতে থাকা উচিত,” এতে আরও বলা হয়েছে।
আতঙ্ক আর বিশৃঙ্খলা
ফিলিপিন্সের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন পিটিভি কিছু ছবি দেখিয়েছে, যেখানে আতঙ্কিত লোকজনের ছোটাছুটির কারণে দাভাও সিটিতে বিশৃঙ্খলার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
ভূমিকম্পের পর দাভাও সিটির একটি হাসপাতালের বাইরে রোগী ও কর্মিরা সরে যাওয়ার জন্য ছুটে আসছেন দেখা যাচ্ছে একটি ছবিতে।
রাস্তায়ও বিভিন্ন স্থানে লোকজনকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
দক্ষিণ ফিলিপিন্সের দাভাও ওরিয়েন্টাল প্রদেশের গভর্নর বলেছেন যে ভূমিকম্প আঘাত হানার পর মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
রয়টার্স জানিয়েছে, কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে ভূমিকম্প খুব শক্তিশালী ছিল।
২০১২ সালে, টাইফুন বোফার পর ওই প্রদেশে শত শত মানুষ নিহত হয়েছিলেন।
ইন্দোনেশিয়ায় কর্তৃপক্ষ জনগণকে ‘শান্ত থাকার’ এবং ‘যাচাই না করা তথ্য ছড়ানো বা বিশ্বাস করা এড়িয়ে চলার’ আহ্বান জানিয়েছে।
“ভূমিকম্পের কারণে ফাটল বা ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে দূরে থাকুন। পুনরায় প্রবেশের আগে আপনার বাড়িটি কাঠামোগতভাবে সুস্থ এবং ভূমিকম্পজনিত ক্ষতি থেকে মুক্ত কি না তা পরীক্ষা করে দেখুন,” দেশটির মেটেরোলজি, ক্লাইমেটোলজি এবং জিওফিজিক্স এজেন্সি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
এটি আরও জানিয়েছে, এখনো পর্যন্ত তারা কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পায়নি।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে ইন্দোনেশিয়ার মিয়াঙ্গাস দ্বীপের একজন শিক্ষিকা , যার নাম ডেসি, তিনি বলেছেন যে ভূমিকম্পগুলো মৃদু ছিল এবং স্থানীয় সময় প্রায় সকাল ১০টা পর্যন্ত কোনো সুনামি হয়নি।
তিনি জানান, ক্লাসে পড়াতে ফিরে এসেছেন তিনি।
এদিকে, উত্তর সুলাওয়েসির মানাডোর এলাকার একজন বাসিন্দা বলেছেন যে ভূমিকম্পটি সেখানে অনুভূত হয়েছে এবং রাস্তায় গাড়ির হর্ন বাজতে শোনা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ উত্তর সুলাওয়েসি এবং পাপুয়া অঞ্চলের জন্য সুনামি সতর্কতা জারি করেছে।
ফিলিপিন্সে প্রাকৃতিক দুর্যোগের এক মৌসুম
আজ সকালে এই ভূমিকম্পটি এমন এক সময় ঘটে যখন ফিলিপাইন এখনো দেশের বিভিন্ন অংশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব কাটিয়ে উঠছে।
গত সপ্তাহে, সেবু প্রদেশের উপকূলীয় শহর বোগোতে ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে ৭৪ জন নিহত এবং ৫০০ জনেরও বেশি আহত হয়।
দেশটি টাইফুন প্রবণ অঞ্চলেও অবস্থিত।
তীব্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় বুয়ালোই ফিলিপাইনের কেন্দ্রস্থলে ছোট ছোট দ্বীপগুলোকে ভাসিয়ে দেওয়ার পর কমপক্ষে ১১ জন মারা যান। লাখো মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল সেসময়।
বছরের সবচেয়ে বড় ঝড় সুপার টাইফুন রাগাসা সেপ্টেম্বরে ফিলিপাইনের উত্তরাঞ্চলীয় কাগায়ান প্রদেশে আঘাত হানে।