Home » জীবনধারা » চিরচেনা মানকচুর গল্প

চিরচেনা মানকচুর গল্প

 

সকালে পান্তা আর স্কুল থেকে এসে গরম ভাত। এ ছিল অনেকটা রুটিন অনুযায়ী প্রধান খাবার । তারপর আম জাম কিংবা জাম জামরুল কৎবেল আঁতা কাঁঠাল নারকেলের পালা । এ পাড়া ঐ বাড়ি এ বাগান ঐ বাগানে । গাছে গাছে বেলা । তারপর কর্ণফুলী নদীর জলজ জোয়ারে গাছ থেকে লাফ দেয়া । এর মধ্যে গাছে গাছে অনাবিল ফাগুনের আগুন বসন্তে কত ফল গাছে পেঁকে লালচে রং ও রুপ ধারণ করে আছে । দৌডঝাপে চোখের সামনে যা পরে তা মুচরিয়ে খাওয়া ।
এভাবে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম আমি । সাড়ে তিন ফুট লম্বা বেতের মধ্যে যে পরিমাণ ভিটামিন ছিল তা ঐ বয়সে ঐ সময়ে টের পেয়েছিলাম । হুজুর মশাই ! অজুহাত ছাড়াই মাইরের মধ্যে দিয়ে শরীরে ভিটামিন ভরে দিত। তারপরও স্কুলে হৈ হোল্লা দৌড়ঝাপ । টিফিন ছুটিতে দোয়াত কলমের কালিতে সাদা শার্টের অস্তিত্ব ছিল না । সেকুল ছুটির পর পরই কিসের শৃঙ্খলা- বইগুলো বোগলের তলে নতুবা ঐতিহ্যের পলিথিনের ব্যাগে ভরে ধানী জমির পাঁকা ধানের আলক্ষেত ধরে বাড়ি ফেরা ।
মা তো মহা খুশি । ছেলে তাঁহার । মস্ত বড় । আই এল এল বি’র ক্লাস শেষ বিদ্যা অর্জন করে ঘরে ফেরা । আমার গায়ের রংটা ছিল কৃষ্ণবর্ণের । উস্ক শুস্ক চুলের মসৃণ তাকা এবং মাথা ঠাণ্ডা থাকতে মা হাল্কা করে নারিকেলের তেল মাথায় দিয়ে দিত। ইট সুরকি পাকা দালানের মধ্যে বিদ্যা অর্জন । তারমধ্যে পণ্ডিত মশাইয়ের অংকের থিউরি “কুব্বো কুব্বো কুব্বা লিজা , কাটাই কুব্বা কাটাইয় লিজ্জা, ২০ কোঠায় হয় ধুলের প্রমাণ ইত্যাদি ••• পারা না পারা বিদ্যা স্বর্গে বেত্রাঘাতের ভুল হয় না মহাশয় কিংবা মহোদয়ের । মাথা গড়িয়ে গর্মাক্ত ও তৈলাক্ত সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয় বানরের তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উপরে উঠা। উঠতে উঠতে গ্রাম নগর শহর ছেড়ে আমেরিকায় চলে আসা ।
যাহোক ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র আমি । স্কুল থেকে আসার পথে মা উত্তর বাগিচায় বিশাল পুকুর পাড়ে গাছের ঝোপে দাঁডিয়ে রইল । ধানি জমি ডিংঙ্গিয়ে পুকুর পাড়ে উঠতে মা এর দেখা । পরে মা ছেলের নিরন্তন অবিচ্ছেদ্য জড়িয়ে ধরার ভালবাসা । পুকুর পাড় থেকে ঘরে আসতে যে টুকু সময় , মা কৌশলে স্কুলের পড়া লেখার খবরাদি জেনে নিল । পরে মা কে বললাম •••
মা

আরও পড়ুন :

কোভিড-১৯: বিশ্বজুড়ে মৃত্যু ৩০ লাখ ছাড়াল

কোভিড-১৯: ব্রাজিলে একদিনে ৪ হাজারের বেশি মৃত্যু

ভাত কি দিয়ে খাব?
মা চমকে উঠলেন । মার স্বর ছোট হয়ে গেল । মা বুঝতে পারছে , ছেলে তাহার •••••••
তো মা বলল, আজ তো তেমন কিছু নেই তবে মানকচুর ঝোল সহকারে আছে । ছোট ছোট চিংড়ি মাছ দিয়ে রান্না করছি ? খুব মজা হলো। মানকচুর কথা – শুনা মাত্র আমার মনের মানদণ্ড যেন বিষণ্ন হয়ে গেছে । বললাম আমি মানকচু খাব না? প্রতিদিন এ কচু ঐ কচু , এ শাক ঐ শাক ডাল এ সবে অতিষ্ট । যখন রেখে গেলাম মা বলল, ঠিক আছে তোর জন্য ডিম সিদ্ধ করে রেখেছি বাবা। এ টুকু খেয়ে নে ? কাল মাংস দিয়ে মটর রান্না হবে !
এ শহরেও মানকচুর পাওয়া যায় । পাউন্ড হিসেবে বিক্রি হয় । প্রতি পাউন্ড মানকচুর $৩.৫০ সেন্ট। ফ্লোরিডায় মানকচুর চাষ হয় । তবে এ সময়ে বাফেলো শহরেও ছোট কচু ও মানকচু হয় । বরফ পরার আগেই তা মরে যায় । বৈজ্ঞানিক নাম (Alocasia macrorrhizos) অরাম পরিবারের (Araceae) একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রজাতি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, নিউ গিনি এবং কুইন্সল্যান্ড দ্বীপের বৃষ্টি অরণ্য মানকচুর আদি জন্মস্থান । বাংলাদেশেও এটি মানকচু নামেই বহুল পরিচিত। তবে অঞ্চলভেদে অন্যান্য নামও পাওয়া যায়। আমাদের চট্টগ্রামে এটি ফ্যানকচু নামে পরিচিত।এ মানকচু ওষুধি গাছ তবে ভাইরাস নিরোধক হিসেবে অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখে ।(Syeed Mahamud Taslim- এর ফেসবুক থেকে)

0 Shares