Home » জাতীয় » দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা বন্দর আধুনিকায়নের ৩৭৮২ কোটি টাকা দেবে চিন

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা বন্দর আধুনিকায়নের ৩৭৮২ কোটি টাকা দেবে চিন

এস এম সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট : দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আধুনিক বন্দর সুবিধাসহ কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সুবিধা বাড়লে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ও যোগাযোগ আরও সহজ হবে বলে মনে করে সরকার। এজন্য ‘মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ৭৮২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার ঋণ দেবে চিন। আর বাকি ৫০০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বলছে, এটি চিন সরকারের জিটুজি ঋণ। প্রকল্পটির বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটির ব্যয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাধারণ বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজের জন্য ব্যয় করা হবে ২২৯ কোটি টাকা, ভূমি উন্নয়নের জন্য ৩২৭ কোটি টাকা, আরসিসি পেভমেন্ট কাজের জন্য ৫৫৮ কোটি টাকা, মেরিন স্ট্রাকচারের জন্য ৬৭০ কোটি টাকা আর হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্টের জন্য ব্যয় হবে ১ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।

প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) কনসালট্যান্সি রিসার্স অ্যান্ড টেস্টিং সার্ভিস (সিআরটিএস) নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্পটি হাতে নেয়ার উদ্দেশ্য হিসেবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে, আধুনিক ও বন্দর সুবিধাসহ কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্মার্ট সলিউশন ও আধুনিক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতিসহ জেটি নির্মাণ, কন্টেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণ, কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ ও বিপজ্জনক কার্গো হ্যান্ডলিং সুবিধা নির্মাণ এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।

এ প্রকল্পটি হাতে নেয়ার যৌক্তিকতা হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলো যেমন ভারত, ভুটান, নেপাল ও চিনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে মোংলা বন্দর একটি কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে। এটি জল ও স্থলভাগের সঙ্গে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বিশ্ববাণিজ্য এবং অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে মোংলা বন্দরে ৪৭টি জাহাজ একসঙ্গে নোঙর করতে পারে, কিন্তু কোনো কন্টেইনার জেটি নেই। মোংলা বন্দরে বর্তমানে বার্ষিক ১ কোটি ৫০ লাখ টন কার্গো এবং ১ লাখ টিইউইএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে।

কন্টেইনার জাহাজের জন্য ডেডিকেটেড কন্টেইনার বার্থ, স্টাফিং-আনস্টাফিং এবং যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে কন্টেইনার ইয়ার্ড, আধুনিক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এসব বিবেচনায় মোংলা সমুদ্রবন্দর আধুনিকায়নের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করে সরকার।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মোংলা বন্দর দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের পাশাপাশি ভারত, নেপাল, ভুটান ও চিনের সীমান্ত এলাকাগুলোর কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। মোংলা বন্দর দিয়ে এসব দেশে ট্রানজিট কার্গো হ্যান্ডলিং করার সম্ভাবনা রয়েছে। খুলনা-মোংলা রেলপথ স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হলে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে কার্গো হ্যান্ডলিং অনেকাংশে বাড়বে।

প্রকল্পটির ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর পর ডিপিপির ওপর গত ১৯ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভার সিদ্ধান্তের আলোকে প্রকল্পটি মোট ৪ হাজার ২৮২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য একনেকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে মোংলা বন্দর খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ওই এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ছে এবং বন্দর ব্যবহার করে সহজেই ঢাকায় পণ্য সরবরাহ করা যাবে। তাই বন্দরটির আধুনিকায়ন খুবই জরুরি। এজন্য প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

0 Shares