Home » জাতীয় » দেশের বিরুদ্ধে বিদেশিদের কাছে চিঠিদাতাদের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না –তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী

দেশের বিরুদ্ধে বিদেশিদের কাছে চিঠিদাতাদের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না –তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী

 

ঢাকা :

 

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহ্‌মুদ বলেছেন, ‘জনগণ থেকে দূরে সরে গেছে বুঝতে পেরে বিএনপি এখন ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। মির্জা ফখরুল সাহেব নিজে দস্তখত দিয়ে চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশকে সাহায্য বন্ধ করে দেয়ার জন্য। সাহায্য মানুষের জন্য, জনগণের জন্য আসে, সাহায্য সরকারের জন্য আসে না। যে রাজনৈতিক দল নিজে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশে সাহায্য বন্ধ করে দেয়ার জন্য বিদেশিদের কাছে চিঠি লেখে, তাদের এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার থাকে না।’

 

আজ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি আয়োজিত করোনা মহামারি ওমিক্রন সংক্রমণ প্রতিরোধে জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে করোনা প্রতিরোধসামগ্রী ও শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী একথা বলেন। দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজীত রায় নন্দীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি প্রধান অতিথি এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।

 

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহ্‌মুদ বলেন, ‘গণমাধ্যমে দেখলাম গতকাল বিএনপি’র একটি সভা হয়েছে, সেই সভায় পলাতক আসামি তারেক রহমান সভাপতিত্ব করেছেন। হাইকোর্টের একটি আদেশ আছে, তারেক রহমানের ব্যাপারে কোনো সংবাদ পরিবেশন করা যাবে না। কিন্তু আমি গণমাধ্যমে দেখলাম তিনি সভাপতিত্ব করেছেন সেই সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। এটি হাইকোর্টের নির্দেশনার বরখেলাপ। তাদের রাজনৈতিক দৈন্য এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে তাদের দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করতে হয়েছে। তাদের দলের যে সংবিধান সেটির ৭ ধারার পরিবর্তন করা হয়েছে যে দুর্নীতির দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত যে কোনো দুর্নীতিবাজও বিএনপি নেতা হতে পারবে। অর্থাৎ দুর্নীতিকে তারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছে। এই লজ্জা কার!’

 

এই করোনার মধ্যে মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ৫ জন নেতা এবং অনেক সংসদ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন, নেতাকর্মিদের মধ্যে কমপক্ষে দেড় হাজার নেতাকর্মি মৃত্যুবরণ করেছে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘চট্টগ্রামে আমার রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উপজেলা মেয়র করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। বিএনপি এবং তার মিত্ররা শুধু ফটোসেশনের মধ্যে আর টেলিভিশনে উঁকি দিয়ে সভা করেছে আর সরকারের সমালোচনা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত পদক্ষেপে অনেক উন্নত দেশের তুলনায় আমরা দেশের মানুষকে বেশি সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হয়েছি। বিএনপি এ নিয়ে যতো অপপ্রচার চালিয়েছে এজন্য তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।’

 

‘যারা সমালোচনা করেছিলেন তাদেরকেও আমরা করোনার টিকার বুস্টার ডোজ দিয়েছি, বিএনপি’র যে নেতারা এখনো বুস্টার ডোজ নেননি, সরকারের কাছে টিকা আছে আসুন আমরা আপনাদেরকে বুস্টার ডোজ দেবো, যাতে আপনারা ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, কিন্তু দয়া করে অহেতুক সমালোচনা করবেন না’ বলেন মন্ত্রী।

হাছান মাহ্‌মুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী পার্লামেন্টে আইন পাস করেছেন যে কীভাবে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। সুশীল সমাজ প্রতিনিধি ও বিএনপি নেতারাও বলেছিলেন এই দেশে ১৫ দিনেও আইন হয়েছে সুতরাং তাড়াতাড়ি একটি আইন করুন। যেই আমরা আইন করার উদ্যোগ নিলাম এবং আইনটি পাস হলো তারা ভিন্ন সুরে কথা বলা শুরু করলেন, মির্জা ফখরুল সাহেবও আবোল-তাবোল বলা শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগ এই আইন পার্লামেন্টে নিয়ে এসেছে এবং এতে বিএনপির সংসদ সদস্যরাও অংশগ্রহণ করেছে, তাদের সংশোধনীও গ্রহণ করা হয়েছে, এরপরও তারা সমালোচনা করেন। আসলে বিএনপিকে ‘না’ রোগে পেয়ে বসেছে। সবকিছুতেই না বলা। না বলতে বলতে নিজেরাই যে কখন নাই হয়ে যায়, আমি সেই শঙ্কার মধ্যে আছি।’

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও এর বিচার বন্ধ করা এদেশে মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় লঙ্ঘন

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এদিন জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিলের ২২তম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা ও এই হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ করাকে এদেশে মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় লঙ্ঘন বলে বর্ণনা করেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা হচ্ছে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির প্রতিষ্ঠাতা, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড এবং তার পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ইনডেমনেটি অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তরিত করে হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ করা। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের উষালগ্নে মুক্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে যারা পাকিস্তানিদের সহায়তা করে যুদ্ধাপরাধ করেছিলো সেটিও ছিলো মানবাধিকারের বিরুদ্ধে অপরাধ।’

‘এই যুদ্ধারপরাধীদের বিচার করা তো দূরের কথা বরং জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়া তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে সামাজিকভাবে পুনর্বাসিত করেছিল’ উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যারা দেশটাই চায়নি, লাল সূর্য খচিত সবুজ পতাকাই যারা চায়নি, এই পতাকার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পতাকার পক্ষে যারা লড়াই করেছে, তাদের গাড়িতে এই পতাকাটি লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল। এগুলো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ছিল এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ছিল। একইসাথে জিয়াউর রহমান ক্ষমতাকে নিষ্কণ্ঠক করার জন্য হাজার হাজার সেনাসদস্যকে বিনাবিচারে হত্যা করেছিল। আর বেগম খালেদা জিয়ার আমলে প্রকাশ্যে দিবালোকে রাজধানীর কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল এবং বেগম আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। এগুলো হচ্ছে দেশে বড় বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা।’

সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার রক্ষা, অন্যায়ের প্রতিকার ও ন্যায়প্রতিষ্ঠা করতে হলে অন্যায়ের প্রতিকার করতে হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ন্যায় ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এই অন্যায়গুলোর বিচারের ব্যবস্থা নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, ২১ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিলের সভাপতি ড. ফরিদ উদ্দিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবনবাজি রেখে সংগ্রাম করেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন আর তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে মানুষের অধিকারকে সমুন্নত রাখতে দিবারাত্রি কাজ করে চলেছেন।’

-ত.বি.

0 Shares