ড্রাগন ব্লাড ট্রি । কিংবা রক্ত বৃক্ষ যার নাম । এ গাছ এখানে নেই । তবে আমদানি কারকরা এ সময় কিছু চারা আমদানি করে , যা সৌন্দয্য ও স্বকীয়তা টপে লাগিয়ে বাসা বাড়ি অফিস কিংবা নাইট ক্লাবে সৌন্দর্যই বৃদ্ধির জন্য ক্রয় করে থাকে ।
এটি জন্মায় মূলত ইয়ামেন উপকূলে । অনেকেই এটিকে রক্ত বৃক্ষ বলে যেমন বাংলাদেশে রয়েছে রক্ত করবী দু’টোই সুন্দর দুটোই বিষ । গাছটি কাটার পর তা থেকে রক্তের মত বের হয় ।
ড্রাগন রক্তগাছটির একটি অনন্য এবং গাছের অদ্ভুত চেহারা রয়েছে, গাছটি বিভিন্ন রুপ ধারণ করে উপরে উঠতে থাকে । অনেকটা তাল গাছের মত সব গাছ ছাডিয়ে মুকুটটি খাড়াভাবে ছাতার আকার ধারণ করে”। আবার কোনটা ১৫/২০ ফুট উপরে উঠতেই শাখা প্রশাখা খাড়া হয়ে মুকুট বা মাথা ভারী করে তোলে । এই চিরসবুজ প্রজাতির গাছের দেহ লাল বৈজ্ঞানিক লল-রজনের নামে নামকরণ করা হয়েছে যা “ড্রাগনের রক্ত” নামে পরিচিত । এ গাছ বেশিরভাগ মনোকোট গাছের থেকে ভিন্ন । অন্যান্য আরবোরসেন্ট ড্রাকেনা প্রজাতির পাশাপাশি এটির “ব্রেইন অভ্যাস” নামে একটি স্বাতন্ত্র্যসূচক বৃদ্ধির অভ্যাস রয়েছে। এর পাতাগুলি কেবল তার কনিষ্ঠ শাখাগুলির শেষে পাওয়া যায়; নতুন পাতা একযোগে পরিপক্ক হওয়ার আগে তার পাতা সমস্ত ৩ বা ৪ বছর পরে সমস্ত শেড করা হয়। এর ফলগুলি বা কোঠা ১ থেকে ৪টি বীজযুক্ত ছোট মাংসল বেরি হয়। এগুলি বিকাশের সাথে সাথে এগুলি সবুজ থেকে কালো হয়ে যায় এবং পাকা হলে কমলা হয়ে যায়। কিছু কিছু পাখি এগাছের গোঠা খেয়ে থাকে । এর বীজগুলি ৪-৫মিমি ব্যাসের হয় এবং ওজন গড়ে ৬০-৭০ মিলিগ্রাম হয় । অন্যান্য মনোকোটাইলেডনগুলির মতো, যেমন খেজুরের মতো, ড্রাগনের রক্ত গাছ কাণ্ডের আগা থেকে বৃদ্ধি পায়, দীর্ঘ, কড়া পাতাগুলি শেষে ঘন রোসেটে বহন করা হয় (4, 5, 7)। এটি পরিপক্কতায় একটি ছাতা-আকৃতির মুকুট তৈরি করতে শাখা করে, যা পাতাগুলি 60 সেন্টিমিটার লম্বা এবং 3 সেমি প্রশস্ত থাকে। ড্রাগনের রক্তের ট্রাঙ্ক এবং শাখাগুলি ঘন এবং স্টাউট এবং দ্বৈতপ্রযুক্ত শাখা প্রদর্শন করে, যেখানে প্রতিটি শাখা বারবার দুটি বিভাগে বিভক্ত হয়।
ড্রাগনের রক্ত গাছ সাধারণত মার্চ মাসের চারপাশে তার ফুল ফোটে। ফুলগুলি শাখাগুলির শেষে বাড়তে থাকে। গাছগুলিতে ফুল ফোটার পর তা অনেক সুগন্ধি দেয় । , সাদা বা সবুজ ফুলের ছোট ক্লাস্টার বহন করে। ফলগুলি পরিপক্ক হতে পাঁচ মাস সময় নেয়। যা ধীরে ধীরে পাকা হওয়ায় সবুজ থেকে কালোতে পরিবর্তিত হয়। মাংসল বেরি ফলটি কমলা-লাল বর্ণ ধারণ করে যেখানে এক থেকে তিনটি বীজ থাকে।
ড্রাগনের রক্ত গাছের অস্বাভাবিক আকার হ’ল পাহাড়ের চূড়ায় যেমন স্বল্প পরিমাণে মাটি থাকে এমন শুষ্ক অবস্থায় বেঁচে থাকার জন্য একটি অভিযোজন। বিশাল, প্যাকযুক্ত মুকুট ছায়া সরবরাহ করে এবং বাষ্পীভবন হ্রাস করে। এই ছায়াটি প্রাপ্তবয়স্ক গাছের নিচে বেড়ে ওঠা চারাগুলির বাঁচতেও সহায়তা করে, কেন গাছগুলি একসাথে আরও বাড়তে থাকে।
ইয়েমেনের উপকূলে আরব সাগরে একটি দ্বীপ রয়েছে যার নাম সুকাত্রা। ভৌগোলিক পরিবেশ ও বিচিত্র ধরনের উদ্ভিদের কারণে এ দ্বীপটি ‘এলিয়েন আইল্যান্ড’ বা ‘ভিনগ্রহবাসীদের দ্বীপ’ নামে পরিচিত। দ্বীপের উদ্ভিদগুলো অদ্ভুত গড়নের। এখানে এমন প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে যা পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। প্রায় ৩৭ শতাংশ উদ্ভিদই এন্ডেমিক। এই অদ্ভুত উদ্ভিদরাজির মধ্যে অন্যতম হল ড্রাগন ব্লাড ট্রি। সুকাত্রা দ্বীপের শুকনো মাটিতে জন্মানো এ গাছটি প্রায় ৩২ ফুট লম্বা হয়। গাছের কাণ্ড ওপরের দিকে বৃদ্ধি পেতে পেতে অসংখ্য ডালপালায় ভাগ হয়ে যায়। ডালগুলোর ঘন সন্নিবিষ্ট পাতার কারণে গাছটি দেখতে একটা ছাতার মতো লাগে। এ গাছ থেকে লাল রঙের আঠালো পদার্থ বের হয়। কথিত আছে, বহুকাল আগে ড্রাগনের রক্ত থেকে এ গাছের উৎপত্তি। যার কারণে গাছটির নাম হয়েছে ড্রাগন ব্লাড ট্রি। এ গাছে আঠালো পদার্থ রং তৈরিতে ও বার্নিশের কাজে ব্যবহৃত হয়। ভেষজ গুণাগুণও রয়েছে। বছরে একবার ফুল দেয়। উপযুক্ত পরিবেশে ড্রাগন ব্লাড ট্রি কয়েকশ বছর বাঁচতে পারে।
[ সাইয়িদ মাহমুদ তসলিম , ওয়েস্ট নিউ ইয়র্ক]