Home » সারাদেশ » সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে পুলিশ এসল্ট মামলা বাজার ও গ্রাম পুরুষ শূন্য

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে পুলিশ এসল্ট মামলা বাজার ও গ্রাম পুরুষ শূন্য

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
৫ জানুয়ারি বুধবার সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মুহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে একাধিক হামলার ঘটনায় পুলিশ এসল্ট মামলা হয়েছে। জামালগঞ্জ থানা পুলিশের পক্ষে এই মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ২০ জন এজাহারভুক্ত আসামির মধ্যে ইউপি সদস্য প্রার্থী বাবুল মিয়াসহ ৭ জনকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। পুলিশের দাবি একাধিক বার ঘটনায় ৫ পুলিশসহ ৪ আনসার আহত হয়েছে। সর্বশেষ হাসপাতালে হামলার ঘটনায় বাবুল মিয়াকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারভূক্ত আসামি বিভিন্ন গ্রামে ও বাজারে খুঁজে বেড়াচ্ছে পুলিশ। হামলার ঘটনায় পুলিশি আতঙ্কে ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের লালপুর বাজারের ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের কারেন্টের বাজারের সকল দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এই দুই গ্রামীণ বাজারের প্রায় ৫ শতাধিক দোকানপাট বন্ধ থাকায় এলাকার ৮ গ্রামের মানুষের আসা-যাওয়া ও বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে। ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের লালবাজার এলাকায় মুহাম্মদপুর, ছেলাইয়া ও মানিগাঁও গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। ২ নম্বর ওয়ার্ডের কারেন্টের বাজার এলাকায় ফেকুল মুহাম্মদপুর, চান্দেরনগর, তেরানগর, রাজাপুর গ্রামের মানুষও পুলিশি আতঙ্কে আছেন। দুইজন ইউপি সদস্যের ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটে। ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ী ইউপি সদস্য হয়েছেন জুয়েল মিয়া। কিন্তু তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বাবুল মিয়া পরাজিত হওয়ার পর কমি-সমর্থকদের নিয়ে মুহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় পুলিশ উপস্থিত হলে তাদের উপরও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বাবুল মিয়ার কর্মি সমর্থকরা। ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনার পর কর্মকর্তাদের উদ্ধার করেন পুলিশ সদস্যরা। পরে পুলিশি প্রহরায় লেগুনা করে ব্যালট বক্স নিয়ে জামালগঞ্জে আসার পথে ব্যালটবক্স ছিনিয়ে নিতে আবারও বাবুল মিয়ার লোকজন হামলা চালায়। পরবর্তীতে নিরাপদে ব্যালট বক্স নিয়ে আসতে সক্ষম হন পুলিশ সদস্যরা। হামলার ঘটনায় ৫ জন পুলিশ ও ৪ জন আনসার আহত হন। অটোরিক্সা চালক জালাল মিয়া, জীবন মিয়া ও বুরহান উদ্দিন বলেন, লাল বাজার ও কারেন্টের বাজারে আমরা গাড়ি নিয়ে আসি না। আসলে পুলিশের হয়রানিতে পড়বো। লাল বাজারের ব্যবসায়ী আঞ্জব আলী ও অঞ্জু মিয়া বলেন, যারা ঘটনায় জড়িত তাদেরকে খুঁজে বের করে পুলিশ গ্রেফতার করুক। কিন্তু আমাদের উপর নির্যাতন চালানো ঠিক নয়। আমরা সবজি বিক্রি করি, মানুষে কিনে খায়। মুহাম্মদপুর গ্রামের জমিরুল ইসলাম, মধু মিয়া বলেন, এখন গ্রামের মানুষ পুলিশের ভয়ে পলাতক আছে। বাড়ি-ঘরে পুরুষ নেই। চুরি-ডাকাতিরও ভয় আছে। নারীরা কিভাবে খাওয়া-পরা করছে তা আল্লাই জানেন। মুহাম্মদপুর গ্রামের আনসার সদস্য মুরসালীন বলেন, আমার ছেলেকে বিনা অপরাধে পুলিশে মারধর করেছে। হাসপাতালে আমার ছেলেকে চিকিৎসা দিয়েছি। ছেলাইয়া গ্রামের মমিনা বেগম ও জাহানারা বেগম বলেন, বাড়িতে পুরুষ লোক নেই। পরিবারের ভরণপোষণ নিয়ে বিপদে আছি। বাজার বন্ধ। দূরের বাজারে যাওয়ার মতো কেউ নেই। কারেন্টর বাজারে উপস্থিত কৃষক আব্দুল মুছাব্বির, গোলাম মোস্তফা বলেন, কৃষি কাজের সময় এমন ঘটনায় গ্রামের সবাই আতঙ্কে আছেন। কৃষি কাজের লোকও নেই। ব্যবসায়ী হেলাল আহমদ ও মুজিবুর রহমান বলেন, আমাদের দোকানের মালামাল পঁচে-গলে যাচ্ছে। পুলিশি আতঙ্কে দোকান খুলছি না। না খুলেও আমরা নির্য়াতিত হচ্ছি। স্কুল শিক্ষিকা রুমানা আক্তার বলেন, আমার স্কুলে এলাকার শিক্ষার্থী অনেকটাই কম। নির্বাচনী ঘটনায় কোনো শিশু আসতে চায় না স্কুলে। বাড়ি-ঘরে অভিভাবকও নেই। নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য ইউসুফ আলী বলেন, যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে গ্রেফতার করার দাবি আমাদের। নবনির্বাচিত ভীমখালী ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বলেন, আমার ভীমখালী ইউনিয়নের মানুষ শান্তিপ্রিয়। কতিপয় ব্যক্তি এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এখন হয়রানিতে পড়েছেন কয়েক গ্রামের মানুষ। নিরীহ মানুষ যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে পুলিশ প্রশাসনের নজর দেয়ার আহবান জানান তিনি। জামালগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আব্দুন নাসের বলেন, একাধিক হামলার ঘটনায় পুলিশ এসল্ট মামলা হয়েছে। মামলায় ২০ জন এজাহারভুক্ত আসামির মধ্যে ৭ জনকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনায় ৫ পুলিশ সদস্যসহ ৪ আনসার সদস্য আহত হয়েছে। সর্বশেষ হাসপাতালে হামলার ঘটনায় জড়িত বাবুল মিয়াকে আটক করা হয়। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারভূক্ত আসামি বিভিন্ন গ্রামে ও বাজারে খুঁজে বেড়াচ্ছে পুলিশ। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত নন তাদেরকে হয়রানি করা হবে না। যদি কোনো পুলিশ সদস্য অযথা হয়রানি করে থাকে, তবে বিষয়টি আমি গুরুত্বসহকারে দেখবো।

0 Shares